নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। লকডাউনের কারণে কাজের সন্ধানে বেড় হতে পারছেন না শ্রমিকরা। উপার্জন বন্ধ হয়ে পড়েছে হতদরিদ্রদের। দুর্যোগকালীন এ সময়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। এই দূরদিনে একমাত্র ভরসা সরকারি সহায়তা। কিন্তু অনেক এলাকায় তাও জোটছে না তাদের। এমন অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে ত্রাণের জন্য বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে হতদরিদ্রদের।
গত সোমবার (২০ এপ্রিল) রংপুরে কলেজরোড পুরনো ট্রাক স্ট্যান্ড, চারতলা মোড়, নাজিরের হাট মুন্সীরমোড় ও পীরগছার কদমতলীতে ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভ করেছে শতশত মানুষ।
তাদের অভিযোগ, এক মাসের অধিক সময় ধরে আমরা কর্মহীন হয়ে বাড়িতে বসে আছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ সহায়ত দেয়া হলেও আমরা এখনও পাইনি।
ত্রাণ সহায়তান না পাওয়ায় গত ১২ এপ্রিল জামালপুর পৌরসভার কর্মহীন দরিদ্র মানুষেরা ট্রাক থামিয়ে ত্রাণের লুট করে নিয়ে যায়। এসময় দরিদ্ররা জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দারে দারে ঘুরেও কোন লাভ হয়নি। ঘরে খাবার নেই। এ কারণে লুট করতে বাধ্য হচ্ছি।
বরিশার, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ ও পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ না পেয়ে বিক্ষোভ মতো ঘটনা ঘটেছে। সবজায়গাতেই বিক্ষোভকারীরা একই অভিযোগ করছেন।
এছাড়া বেতন না পেয়ে বিক্ষোভ করেতে দেখা গেছে কারখানার শ্রমিকদেরও। এমকি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অ্যাগ্রো ফার্মে কর্মচারিরাও চার মাসের বেতন না পেয়ে গতকাল ২০ এপ্রিল বিক্ষোভ করেছে।
এর বিপরিত চিত্রও আছে। অনেক স্থানে সরকারি সহায়তার ত্রাণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। যাতে করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা বজায় থাকে। তারপরও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবি কম।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক জানান, জেলার ত্রাণের জন্য বরাদ্দ এসেছে ৪৯ লাখ টাকা। বিরতণ করা হয়েছে এক লাখ হত দরিদ্র মানুষের মাঝে। চাল এছেসে এক হাজার মেট্রিক টনের ওপরে। সে চালও বিতরণ করা হয়েছে এক লাখেরও বেশি মানুষের মধ্যে।
জেলায় টাকার অংকে বড় দেখালেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবি কম। হিসেব করলে দেখা যায়, ৪৯ লাখ টাকা এক লাখ মানুষের মাঝে বিতরণ করলে জন প্রতি পেয়েছে মাত্র ৪৯ টাকা। এ টাকায় সর্বোচ্চ এক কেজি চাল পাওয়া যাবে, এর বেশি নিয়।
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক জানান, করোনা সংকটকালীন সময়ে জেলা ত্রাণ এসেছে প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন। জেলা ৬টি উপজেলায় ভাগ করে দেয়া হয়েছে ত্রাণের এই চাল।
সেখানেও হিসেব করলে দেখা যায়, প্রতিটি উপজেলা চাল পেয়েছে গড়ে ১৬৬ মেট্রিকটন। প্রতিটি উপজেলায় ১৪ থেকে ১৬টি ইউনিয়ন রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ ১০ মেট্রিকটন। প্রতিটি ইউনিয়নে ৯ থেকে ১১টি করে ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ ১ মেট্রিকটনেরও কম। হতদরিদ্রদের জন্য ১০ করে বরাদ্দ দেয়া হলে পাবের মাত্র ১০০ থেকে ১১০ জন। অথচ একেকটি ওয়ার্ডে হতদরিদ্রের সংখ্যা এর কয়েকগুন বেশি।
একই চিত্র দেশের প্রতিটি জেলার। বেশিরাভাগই দরিদ্র কর্মহীন মানুষ থেকে যাচ্ছে ত্রাণ সহায়তার বাইরে। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে তাদের।
সচেতন মহল বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ সহায়তা খুবি কম। অন্যদিকে বিভিন্ন স্থানে জনপ্রতিনিধিদের চাল চুরির খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেককে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তারপরও থামছে না চাল চুরির ঘটনা। একেতো বরাদ্দ কম। তার উপর জনপ্রতিনিধিদের চুরির কারণে সংকট আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।
এ কারণেই ত্রাণ না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছে হতদরিদ্ররা। ত্রাণের চাল চুরি বন্ধ এবং বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়ানোর দাবি সব মহলের। তা না হলে যে কোন মুহূর্তে খাবারের অভাবে বড় আকারে জন বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এমনটি হলে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
তাই ত্রাণ বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়ানো এবং সুষ্ঠু বন্টনের মাধ্যমে সব হতদরিদ্রদের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার আহ্বান সব মহলের।