শরীফ ইকবাল রাসেল, নরসিংদী : নরসিংদীতে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গ্রীষ্মকালের শুরু থেকেই শহরাঞ্চলের বেশিরভাগ বাসা বাড়ির সেচপাম্প ও নলকূপ দিয়ে উঠছে না পানি। কোথাও কোথাও গভীর নলকূপেও তোলা যাচ্ছে না বাসা বাড়ির প্রয়োজনীয় পানি। তীব্র তাপদাহে এ অবস্থা আরো প্রকট হওয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সঙ্কট। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শহরে বাসা বাড়ির বাসিন্দারা।
পরিবেশগত নানা কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
নরসিংদী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নরসিংদী জেলায় সাধারণত পানির স্তর গড়ে ২২ থেকে ২৮ ফুট গভীরে। গ্রীষ্মকালে এই স্তর থাকে ২৮ থেকে ৩৫ ফুট গভীরে। বেশিরভাগ এলাকায় পানির সাধারণ এ স্তরের গভীরে পৌঁছালেই পানির স্তর পাওয়া যেতো। প্রায় এক যুগ ধরে পরিবেশগত নানা কারণে জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিশেষ করে জেলা শহর ও শিল্পাঞ্চলে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে গেছে। প্রতিবছর তাপদাহ তীব্র হওয়ার সময়টাতে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এ অবস্থা আরো প্রকট আকার ধারণ করে থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারও জেলার বেশিরভাগ এলাকার অগভীর (৬১ মিটার পর্যন্ত) নলকূপে পানি উঠা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে নরসিংদী পৌরশহর, শিল্পশহর মাধবদী, পাঁচদোনা, পলাশ উপজেলার কিছু অংশ ও আশপাশের এলাকায় পানি সংকট চরমে পৌঁছেছে। খাবারের জন্য সুপেয় পানির সংকট হওয়ায় চরম দুর্ভোগে স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগী জনসাধারণ জানান, শুধু অগভীর নলকূপে (৬১ মিটার পর্যন্ত) নয়, শহর এলাকায় গভীর নলকূপেও (৬১ মিটারের অধিক) পানি উঠছে না। দেড়শ থেকে ২ শত ফুট গভীরে গিয়েও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এতে তাপদাহ বাড়ার সাথে সাথে পানি সংকট বাড়ছে। আশপাশের এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করে জীবনযাপন করছেন অনেক পরিবার। বাধ্য হয়ে অনেকে প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করছেন পুকুর কিংবা নদী নালার পানি। নিরাপদ পানির সুব্যবস্থা করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে পানি সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের।
নরসিংদী শহরের পূর্ব ভেলানগর (আজিজ বোর্ডিং) এলাকার শাহাদাৎ হোসেন জানান, অন্যান্য বছর কিছুটা কম সমস্যার সম্মুখীন হতো। এ বছর গরম শুরু হওয়ার পর থেকে বাসার অগভীর সেচ পাম্প দিয়েও পানি উঠানো যাচ্ছে না। এতে বাড়ির ভাড়াটিয়াসহ নিজেরা ভীষণ বিপাকে পড়েছি। বাধ্য হয়ে আরও ব্যয়বহুল গভীর নলকূপ (সাব-মার্সেবল) স্থাপন করতে হচ্ছে।
শহরের ব্যাংক কলোনির বাসিন্দা মাসুদ পারভেজ বলেন, ৪তলা বিশিষ্ট একটি ভবন তৈরি করে কয়েক বছর যাবৎ ভাড়া দিয়েছি এবং নিজেরাও থাকি। এখন পানির সংকটে ভাড়াটিয়া থাকতে চাচ্ছে না। আর আমরাতো কষ্ট করছিই।
চিনিশপুর ইউনিয়নের দাসপাড়া এলাকার শাহাদাত, শিহাব ও আলামিন জানান, প্রতি বছরই এই সময়ে এ অঞ্চলের টিউবওয়েল দিয়ে পানি ওঠে না। প্রয়োজন মেটাতে দূরবর্তী বিভিন্ন লোকজনের সাব-মার্সেবল (গভীর নলকূপ) থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়া অন্যান্য কাজের জন্য পুকুরের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। প্রতি বছরই এই পানি সংকট বাড়ছে। ব্যয়বহুল হওয়ায় সবার পক্ষে গভীর নলকূপ স্থাপন সম্ভব হয়ে ওঠে না। পানি সংকট সমাধানে সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার সামসুল ইসলাম জানান, নরসিংদী শিল্পাঞ্চল হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলন হয়। এছাড়া পরিবেশগত নানা কারণে গ্রীষ্মকালে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য হস্তচালিত টিউবওয়েল এর পরিবর্তে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তালিকামতে গভীর নলকূপ সাব-মার্সেবল পাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। কয়েক মাস এ সমস্যা চলমান থাকলেও বৃষ্টিপাত হলে এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এছাড়া প্রাকৃতিক উৎস থেকে পানি ব্যবহার করে পানির সমস্যা দূরীকরণের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
সান নিউজ/কেটি