নিজস্ব প্রতিনিধি, ভোলা : নদী বেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলায় কোনো রিভার ফায়ার স্টেশন না থাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকির মুখে জেলার ফেরিঘাট ও চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ। প্রায়ই নদীর মাঝ খানে ফেরিতে ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা। ফলে নষ্ট হচ্ছে ব্যবসায়ীদের কোটি টাকার সম্পদ। শুধু তাই নয় বিভিন্ন চরাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে গতানুগতিক পদ্ধতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় দমকল বাহিনীকে। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে একটি স্থল কাম নদী ফায়ার স্টেশনের দাবি জানিয়ে আসলেও এর বাস্তবায়ন হয়নি এখনও। তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর উপ-পরিচালক জানান, অগ্নিঝুঁকি ও নৌ-দুর্ঘটনা হ্রাস করার জন্য ভোলায় ৪ টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করার জন্য অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
চারদিকে নদী বেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলায় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নৌ- রুট ও ফেরি সার্ভিস। সম্প্রতি ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুটে মেঘনা নদীর মাঝখানে ‘এমভি কলমীলতা’ নামে একটি ফেরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পণ্যবাহী ট্রাকসহ নয়টি গাড়ি পুড়ে গেছে। আগুন লেগে প্রায় ৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা। শুধু স্থল ফায়ার সার্ভিস দিয়ে আগুন নেভানো সম্ভব হচ্ছে না। মাঝনদীতে আগুন লাগলে সড়ক পথে ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। তাই ব্যবসায়ীদের দাবি জেলায় রিভার ফায়ার স্টেশন থাকলে আগুন লাগার ঘটনা শুনার সাথে সাথে আগুন লাগার স্থানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
নাগরকি সমাজের প্রতিনিধি এডভোকেট নজরুল হক অনু জানায়, ঢাকা থেকে বিভিন্ন মালামাল ট্রাকে করে আসলে তখন ফেরিতে করেই আসতে হয়। কিন্তু ফেরিতে যদি আগুন লাগে তখন তাৎক্ষণিক আগুন নেভানোর কোন সুযোগ থাকে না। সম্প্রতি কলমীলতা ফেরিতে আগুন তার দৃষ্টান্ত উদাহরণ। ভোলা শহর থেকে ফায়ার সার্ভিসের টিম নদী পথে মাঝ নদীতে আগুন নিভাতে যে সময় লাগে এরই মধ্যে সব পুড়ে শেষ হয়ে যায়। তাই আমি মনে করি নদী পথে অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে ভোলা- লক্ষীপুর ফেরি ঘাটে একটি ভাসমান রিভার ফায়ার স্টেশন নিমার্ণ করা দরকার। তাই ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা নেয়ার সময় অগ্নিঝুঁকি নিরসন করার জন্য অতিদ্রুত সরকারের এখানে রিভার ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা উচিত।
ভোলা ইলিশা এলাকার সমাজসেবক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ভোলায় দুটি ফেরিঘাটসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল রয়েছে। সেখানে আগুন লাগলে তাৎক্ষণিক গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে অনেক সময় লেগে যায়। সম্প্রতি মেঘনা নদীর মাঝখানে ফেরিতে আগুন লাগার কারণে ফায়ার সার্ভিস দেরিতে পৌঁছানোর কারণে ৯ টি মালবাহী গাড়ী পুড়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে। ভোলা যে ফায়ার স্টেশন আছে তা নদীতে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা অনেক কষ্টকর। তাই সরকারের কাছে দাবি করছি এই অঞ্চলের মানুষের গুরুত্বের কথা চিন্তা করে এখানে রিভার ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হউক।
বিআইডব্লিউটিসির বিভাগীয় প্রধান মো: ইমরান হোসেন জানান, ভোলাসহ ২১ জেলার পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে ভোলা-লক্ষীপুর, ভোলা-বরিশাল ফেরি সার্ভিস হয়ে । ফলে প্রতিনিয়ত অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি নিয়ে এই রুটে ব্যাবসায়ীরা পণ্য আনা নেয়া করে থাকেন। তাই ইলিশা ফেরি সার্ভিস এর পাশেই অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে এখানে রিভার ফায়ার স্টেশন (নৌ-ফায়ার সার্ভিস) নির্মাণ করার আহবান জানায়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভোলা এর উপ-পরিচালক মো: ফারুক হোসেন সিকদার জানায়, ভোলা একটি নদী মাত্রিক এলাকা। এখানে নৌ-পথে ও চরাঞ্চলে প্রচুর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকে। তাই অগ্নিঝুঁকি ও নৌ-দুর্ঘটনা হ্রাস করার জন্য ভোলায় ২টি স্থল কাম নদী ফায়ার স্টেশনসহ ৪ টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করার জন্য অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ভোলার ইলিশায় একটি অন্যটি চরফ্যাশনের বেতুয়া নদীতে স্থল কাম নদী ফায়ার স্টেশন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এগুলো নির্মাণ করা হলে আশা করি ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতি পরিমান কমে আসবে।
এছাড়া জেলার বিচ্ছিন্ন ছোট বড় মিলে ৭০ টির মতো চরঞ্চল রয়েছে। সেখানে দ্রুত গতিতে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন পৌঁছাতে হলে অবশ্যই পানি পথে যেতে হবে। সেই কারণেই নৌ-ফায়ার স্টেশন (রিভার ফায়ার স্টেশন) খুবই জরুরি। জেলায় বর্তমানে ৭টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন আছে।
সান নিউজ /আরএস