স্বপন দেব, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার জেলায় দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার। অথচ বিগত ৬ মাসেও জেলা সদর হাসপাতালে বসেনি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট।
করোনার সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে জেলা বিএমএ নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও প্রবাসীদের সহায়তায় জেলার সদর হাসপাতালে হাই-ফ্লো নেজাল দিয়ে করোনা রোগীদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসা দেয়ার কাজ অনেকটা এগিয়ে ছিল। সে সময় জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত পরিবেশ ও বন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, স্থানীয় সাংসদ নেছার আহমদসহ সর্বমহল থেকে জেলার সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের জোর দাবি জানান সরকারের কাছে।
প্রায় বছর খানেক আগে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে রোগীদের জন্য ৬ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেই উদ্যোগ আটকে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। এক বছর পরে অক্সিজেন প্লান্টের কাজ ২০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে এই প্লান্ট স্থাপনের কাজের তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। কবে প্লান্টের কাজ শেষ হবে আর করোনা রোগীরা তার সেবা পাবে সেটা অনিশ্চিত।
দিন দিনই করোনা রোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ায় করোনা আক্রান্তদের বাঁচানোর অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হচ্ছে নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ। গত বছর মৌলভীবাজারে স্থানীয়দের উদ্যোগে কেনা সেই ৩টি হাই-ফ্লো নেজাল দিয়ে চলছে বর্তমানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা। আর এ যন্ত্রগুলো কার্যকর রাখতে সিলিন্ডার অক্সিজেন উচ্চমূল্যে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের।
সরকার ঘোষিত করোনার দ্বিতীয় ধাপে দেশে সংক্রমণের র্শীষ তালিকায় থাকা ২৯ টি জেলার মধ্যে শীর্ষে আছে মৌলভীবাজার জেলা। এখানে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মুমূর্ষু রোগীর সংখ্যা। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ। অথচ মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত সিট ও চিকিৎসার সরঞ্জাম আছে বললেও রোগীরা এ হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা নিতে ভরসা পাচ্ছে না।
জানা যায়, মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চাহিদা অনুসারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুরোধে ইউনিসেফের অর্থায়নে হাসপাতালের ২৫০ বেডে অক্সিজেন সাপ্লাই দেয়ার জন্য একটি অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্থাপন হয়নি করোনা চিকিৎসার প্রয়োজনীয় উপাদান লিকুইড অক্সিজেনের ট্যাংক ও প্ল্যান্টের কাজ।
ইউনিসেফের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, অক্সিজেন প্লান্ট নিমার্ণের জন্য স্থানীয় হাসপাতাল চাহিদাপত্র পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। এ রকম ৩০ টি প্লান্ট সারাদেশে নির্মাণের জন্য ইউনিসেফের সহযোগীতা চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। ইউনিসেফ দেশের ৩০ টি জেলায় এই প্লান্ট নির্মাণ করছে। মৌলভীবাজারে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে একটি অক্সিজেন প্লান্ট নিমার্ণ শুরু হয় প্রায় ২ মাস আগে কিন্তু পরে কাজ কিছুদিন বন্ধ থাকে। বর্তমানে লকডাউনের কারণে শ্রমিক সংকটে কাজের গতি থেমে আছে। ফলে এ প্লান্ট চালু করতে আর ৩ মাস লাগতে পারে।
ইউনিসেফের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা ডা.মির্জা ফজলে এলাহী জানান, ৬ হাজার লিটারের এই প্লান্ট নির্মাণে আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে কাজটি শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
এ বিষয়ে বিএমএ মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি ডা. সাব্বির হোসেন খান জানান, কাগজে কলমে ৬ মাস আগে কাজ শুরু হলেও বাস্তবে ২ মাস আগে শুরু হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি হয়ে গেলে রোগীরা যেমন চিকিৎসা পাবেন অপরদিকে রোগীদের আর অক্সিজেনের মূল্য দিতে হবেনা।
সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. পার্থ সারথি দত্ত কাননগো বলেন, প্লান্ট নির্মাণের কাজ দ্রুতই চলছে। আমরা আশাবাদী আগামী ২ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। বর্তমানে করোনা রোগীদের তেমন সমস্যা হচ্ছে না ৫০ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা চালানো হচ্ছে।
সান নিউজ/আরএস