নিজস্ব প্রতিনিধি, কুমিল্লা : প্রান্তরজুড়ে সবুজ কচুগাছ। বাতাসে দোল খায় সবুজ পাতা। মাথা নুয়ে কচুগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। পাশাপাশি জমি থেকে সংগ্রহ করে কচুর লতি জমা করা হয় উঁচু রাস্তার পাশে।
এই লতি উড়োজাহাজে চেপে কয়েক দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, যেখানে বাঙালিরা থাকে।
কুমিল্লার কচুর লতির চাহিদা এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে।
জমি থেকে সংগ্রহ করা কচুর লতি পরিষ্কার করে আঁটি বাঁধা হয়। পিকআপ-ট্রাক নিয়ে পাইকাররা আসেন। দরদাম করেন। আঁটিবোঝাই লতি নিয়ে চলে যান ঢাকা ও চট্টগ্রামে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর কুমিল্লা জেলায় ৩৮২ হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ করা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে বরুড়া উপজেলায়। সেখানকার কৃষকরা জানান, কচুগাছ একবার রোপণ করলে বছরজুড়ে তার ফলন হয়। বরুড়া উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া কচু চাষের উপযোগী বলে বহু বছর ধরে বরুড়ায় কচুর লতির চাষ হয়ে আসছে।
সারা বছর কচুর লতির ফলন হলেও মূলত এটি গ্রীষ্মকালীন ফসল। বছরের মার্চ থেকে জুন-জুলাই পর্যন্ত ফসল বেশি হয়। এ সময় কৃষকদের ব্যস্ততা বেশি।
বরুড়ার কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, ৩০ শতক জমিতে তিনি কচু চাষ করেছেন। বিনিয়োগ করেছেন ২০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৫৭ হাজার টাকার কচুর লতি বিক্রি করেছেন। এখনও আরও অন্তত ছ’মাস কচুর লতি বিক্রি করতে পারবেন। লতি বিক্রি শেষ হলে কচু বিক্রি করবেন।
কৃষক আজাদ বলেন, ‘আমডার বাপ-দাদা কচু লাগাইত। খাটুনি বেশি লাভও বেশি। বাপ-দাদারার মতন আমডাও কচুর চাষ করি।’
কৃষক আমিন বলেন, ‘আমডার বরুড়ার লতি দেখতে সুন্দর। খাইতেও ভালা। আমডার জমির লতি ইলশা মাছের মাথা ভাইঙ্গা রানলে গরুর গোশতও খাইতো না।’
বছরের সাত থেকে আট মাস প্রতিদিনই কুমিল্লা থেকে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন লতি দেশের বিভিন্ন জেলা সদরে যায়। এর সিংহভাগ যায় বরুড়া উপজেলা থেকে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, প্রতি মাসে ৮ মেট্রিক টন লতি রপ্তানি হয় বিভিন্ন দেশে। কচুর লতি উৎপাদনে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের জন্য সার, বীজ কীটনাশক দেয়া হয়। এ ছাড়া কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেন।
সান নিউজ/এসএম