নোয়াখালী প্রতিনিধি:
করোনা পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য উপকরণ না পাওয়ায় স্বাস্থ্য সচিবের সমালোচনা করায় নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী সার্জন (অ্যানেসথেসিওলজিস্ট) ডা. আবু তাহেরের কাছে কৈফিয়ত তলব করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী।
ডা. আবু তাহেরের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টের মন্তব্য ’সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তুষ্টি, ভুল বোঝাবুঝি বা বিদ্বেষের সৃষ্টি করতে পারবে বা প্ররোচিত করতে পারে’ বলে কৈফিয়ত তলবের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার (১৮ এপ্রিল) ফেসবুক পোস্টে ডা. আবু তাহের বলেছেন, ‘সত্য কথা বলার শাস্তি’ হিসেবে তাকে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর স্বাক্ষরিত কৈফিয়ত পত্রে উল্লেখ করা হয়, 'গত ১৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা ২৪ মিনিটে নিজের ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দেওয়ায় এর মাধ্যমে মাস্ক ও পিপিই প্রাপ্তি বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে শিষ্টাচার বর্জিত শব্দ প্রয়োগে অভিযুক্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন ডা. আবু তাহের।'
হাসপাতালের সব ওয়ার্ডে ও বিভাগে চাহিদা অনুযায়ী পিপিইসহ যাবতীয় সুরক্ষা সামগ্রী মজুদ রয়েছে বলে দাবি করেন তত্ত্বাবধায়ক।
চিঠিতে তিনি বলেন, ‘পিপিইসহ যাবতীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের নির্দেশনা এবং হাসপাতাল স্টোরে উল্লেখিত সামগ্রী মজুত বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকা স্বত্বেও আপনি এ বিষয়ে এমন মন্তব্য করেছেন যা সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে মধ্যে অসন্তুষ্টি, ভুল বোঝাবুঝি বা বিদ্বেষের সৃষ্টি করতে পারে বা প্ররোচিত করতে পারে।
এটা সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ এর পরিপন্থী। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৩ (খ) বিধি মোতাবেক অসদাচরণ হিসাবে গণ্য এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।'
কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হবে না তা জানাতে চিঠি পাঠানোর তিন কর্ম দিবসের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক বরাবর কারণ দর্শানোর জন্য ডা. আবু তাহেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
অতীতে ডা. আবু তাহেরের সঙ্গে একজনের বাদানুবাদের কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, 'সাম্প্রতিককালে অপারেশন থিয়েটারে জনৈক সহকারী অধ্যাপকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের (কোনও কর্মকর্তা বা ভদ্রলোকের পক্ষে অনুচিত শিষ্টাচার বিহীন আচরণ) কারণে আপনি প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনার প্রেক্ষিতে অভিযোগের দায় থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি পেয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছি।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আবু তাহের বলেন, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ১৬ এপ্রিল ঢাকা বিভাগের সঙ্গে টেলি কনফারেন্সে চিকিৎসকদের জন্য পিপিই ও মাস্কসহ সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করার কথা বলেন। এ সব সরঞ্জাম থাকার পরও আমাদের দেওয়া হয়নি। সে কারণে আমার ব্যক্তিগত মতামত থেকে আমি স্ট্যাটাস দেই। আমি নিশ্চিত হয়ে বলছি, আজ পর্যন্ত নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালসহ দেশের কোনও হাসপাতালে এন৯৫ মাস্ক বা সমমানের মাস্ক কোথাও প্রদান করা হয় নাই।"
গত ১ মাসে এনেসথেসিয়া ডিপার্টমেন্টে আট জনের জন্য দুটি পিপিই ও সাধারণ মানের মাস্ক দেওয়া হয়েছে। আজ সকালে আমাদের ডিপার্টমেন্টে ৫০টি সার্জিক্যাল মাস্ক দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো জোর দিয়ে বলেন, 'পিপিই ও মাস্ক না পেলেও চিকিৎসা সেবা দিয়ে এসেছি এবং ভবিষ্যতেও দেবো।'
সাম্প্রতিককালে অপারেশন থিয়েটারে এক সহকারী অধ্যাপকের দুর্ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কাজ করতে গেলে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। পরে আমি দুঃখপ্রকাশ করলে বিষয়টি সেখানে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু সেটাকে এ বিষয়ের সঙ্গে একত্র করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ' তিন কার্যদিবসের মধ্যেই শোকজের জবাব দেবেন বলে তিনি জানান।
এ ঘটনার পর ডা. আবু তাহের তার ফেসবুকে আবারো একটা পোস্ট দেন…
শনিবার বিকালে এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, 'সত্য কথা বলার শাস্তি। একটাও মিথ্যা বলছি প্রমাণ করতে পারলে শাস্তি মেনে নেব। এই যুদ্ধে সামনে থেকে ছিলাম, আছি, থাকব।'
এরপর তিনি আগের সেই স্ট্যাটাসটি রিপোস্ট করেন।
যে স্ট্যাটাসের জন্য শোকজ করা হলো তাতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি নোয়াখালী ২৫০শয্যা সদর হাসপাতালে কর্মরত একজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট। রোগীর সবচেয়ে কাছ থেকে আমি চিকিৎসা দেই। গত এক মাসে প্রতিদিন হাসপাতালে গিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমি সহ আমার ডিপার্টমেন্টের কেউ একটিও এন৯৫/কেএন৯৫/এফএফপি২ মাস্ক পাইনি। তাহলে স্বাস্থ্য সচিব মিথ্যাচার কেন করলেন উনি এন৯৫ ইকোয়িভেলেন্ট মাস্ক দিচ্ছেন? তাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্যা বলছে? এই মিথ্যাচারের শাস্তি কী হবে? গত এক মাসে আমার ডিপার্টমেন্টে আট জনের জন্য দুটি পিপিই দেওয়া হয়েছে। এই হলো পর্যাপ্ত পিপিই মজুদ। ওহ কী বলবেন, আমরা কাজ করি না? গত এক মাসে ১৫০ এর মতো অপারেশন আমি একাই করেছি। বাকিদের হিসাব দিলাম না। আপনাদের ওসব পিপিই-মাস্ক না পেয়ে আমরা বসে নাই, বসে থাকবোও না। কিন্তু জাতির সামনে মিথ্যাচার কেন করবেন।’
তিনি লিখেন, ‘আমি নিজের বেতনের টাকায় কেনা সার্জিকাল মাস্ক পরে প্রতিদিন অপারেশন করি। পিপিই নিজের টাকায় কেনা আছে ,অন্যরা না পরলে একা পরে কী হবে, তাই পরি না। তিন মাস কী প্রস্তুতি নিয়েছেন? এখন বলেন এগুলো পাওয়া যাচ্ছে না? আমাদের অনেকে আজ আপনাদের এসব মিথ্যাচারের কারণে আক্রান্ত।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এরকম অনেক মিথ্যা প্রস্তুতির নাটক সাজিয়ে হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে কিছু লুটেরার দল।’
এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীকে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সন্ধ্যার পর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোমিনুর রহমান কল রিসিভ করলেও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস প্রতিনিধিকে বলেন, বিষয়টি এইমাত্র আপনার থেকে শুনলাম। আমি এ ব্যাপারে হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট এর সঙ্গে আলাপ করবো। সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন।
সান নিউজ/সালি