খান রুবেল, বরিশাল প্রতিনিধি : বরিশাল অঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ ক্রমশই চরম আকার ধারণ করছে। সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যুর পরিসংখ্যানও। গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চার দিনের ব্যবধানে বরিশাল বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে, ‘বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৬৫২ জন মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ডায়রিয়ায় মৃত্যু হওয়া ছয় জনের মধ্যে চারজন বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। বাকি দু’জনের বাড়ি বরগুনা জেলায়। এদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে নিজ নিজ বাড়িতে। এছাড়া একজনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে।
তাছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলায় এবং অপরজন বরগুনার বেতাগী উপজেলায়।
বাকেরগঞ্জে নিজ বাড়িতে মৃত্যু হওয়া দুজনের মধ্যে একজন উপজেলার পাদ্রিশিবপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ২৫ বছর বয়সী নারী এবং অপরজন একই উপজেলার ভরপাশা এলাকার দাশপাড়া গ্রামের ৪৫ বছর বয়সী পুরুষ।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল একই উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়ন এবং ভরপাশায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়। সবশেষ শনিবার রাত ৩টায় দাশপাড়া গ্রামে এক নারীর মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাকেরগঞ্জ উপজেলা থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শঙ্কর প্রসাদ অধিকারী জানিয়েছেন, ‘বরিশাল জেলার মধ্যে বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি বেশি বেড়েছে। এ উপজেলায় শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ১১৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ শয্যার একটি ডায়রিয়া ওয়ার্ড রয়েছে। অথচ এর প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় রোগীদের ওয়ার্ডের মেঝেতে এবং বারান্দায় রেখে চিকিৎসা প্রদান করতে হচ্ছে।
আবার চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব রয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত আইভি স্যালাইন গত বুধবার শেষ হয়ে গেছে। আমরা সিভিল সার্জনসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। তবে বর্তমানে বাকেরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের জন্য কিছু পরিমান স্যালাইন কিনে দিয়েছেন।
এদিকে, বরিশাল মহানগরীতেও ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী চাপ বহু গুন বেড়েছে।
এর মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শিশু রোগী ভর্তি সংখ্যা ৩৫ জনের বেশি রয়েছে। আর জেনারেল হাসপাতালে ৪ শয্যার দুটি ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হয়েছেন ৭০ জনের মতো। জায়গা সল্পতার কারণে হাসপাতালের বাইরে সামিয়ানা টাঙিয়ে রোগী ভর্তি রাখার ব্যবস্থা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানিয়েছেন, ‘চলতি মাসের শুরু থেকে হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার প্রকোপ ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। চলতি মাসে এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৬৫২ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যতো রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬৭ জন রয়েছে ভোলা জেলায়। এরপর পটুয়াখালী জেলায় ৬ হাজার ৩৬৪ জন, বরগুনা জেলায় ৪ হাজার ২০৩ জন, পিরোজপুরে ৩ হাজার ৬২৮ জন, বরিশাল জেলায় ৩ হাজার ৬০৬ জন এবং ঝালকাঠি জেলায় রয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ জন।
বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেক কুমার দাস বলেন, ‘বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৮০-৯০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। জেনারেল হাপাতালে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় হাসপাতালের বাইরে সামিয়ানার ব্যবস্থা করে তার নিচে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অনেক মানুষ করোনার ভয়ে হাসপাতালে আসতে পারছে না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগে জনবলের ব্যাপক সংকট রয়েছে। তাছাড়া স্যালানেরও কিছুটা সংকট রয়েছে। আমরা ঢাকায় চিঠি পাঠিয়েছি। খুব শিঘ্রই সংকট মুছে যাবে। তাছাড়া সংকট থাকলে এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষও সরকারিভাবে স্যালাইন সরবরাহ করতে পারবে।
স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাব রয়েছে বলেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ নদী এবং পুকুর ও খালের পানি ব্যবহার করছে গৃহস্থলির কাঝে। এমনকি ওই পানি তারা পানও করছে। এ কারণে ডায়রিয়ার সংক্রমণ বেড়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি বরিশালের নদ-নদীতে লবণ পানি ঢুকে পরাও ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
সান নিউজ/আরএস