বরিশাল প্রতিনিধি: লকডাউন যানবাহন চলাচল বন্ধ। পাওয়া যাচ্ছিল না অ্যাম্বুলেন্স। তাই নিরুপায় হয়ে মাকে বাঁচাতে নিজের পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেল চালিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন ব্যাংকার ছেলে।
শনিবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকে এমন একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। ওই ছবিটি বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট এলাকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫৭ বছর বয়সী অসুস্থ ওই নারীর নাম রেহানা পারভীন। তিনি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি পৌর শহরের বাসিন্দা। তার ছেলে জিয়াউল হাসান কৃষি ব্যাংকের ঝালকাঠি শাখার কর্মকর্তা।
রেহানা পারভীনের বোনের ছেলে নাঈম হোসেন জানান, নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রেহানা পারভীন। কয়েক দিন আগে তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়।
এরপর নমুনা পরীক্ষার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নমুনা দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার তার করোনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ আসে।
শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বাড়িতেই আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। অক্সিজেন লেভেল কমে আসায় তাকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন দেয়া হয়। কিন্তু শনিবার বিকেলে তার তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
ছেলে জিয়াউল হাসানের বরাত দিয়ে নাঈম জানান, লকডাউনের কারণে এমনিতেই সড়কে যানচলাচল খুবই সীমিত। আর রেহানা পারভিন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তাকে কেউ হাসপাতালে নিতে চাচ্ছিলেন না।
কোথাও ফোন করে অ্যাম্বুলেন্সও পাওয়া যায়নি। এমন অবস্থায় তার শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে যায়। তাই তাকে মোটরসাইকেলে নিয়েই রওয়ানা হন ব্যাংকার ছেলে জিয়াউল হাসান।
এদিকে, বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন হিরণ পয়েন্টে দায়িত্বে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট তৌহিদ টুটুল বলেন, ‘আমরা ওই এলাকায় রুটিন দায়িত্ব পালন করছিলাম। তখন বাকেরগঞ্জের দিক থেকে মোটরসাইকেলটি আসছিল।
যিনি মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন তিনি ছিলেন হেলমেট পরা। যে কারণে তার চেহারা দেখতে পাইনি বা দেখার চেষ্টাও করিনি। মোটরসাইকেল থামিয়ে হয়তো তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারতাম। কিন্তু সেটি হতো অমানবিক।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মোটরসাইকেলটি দেখে প্রথমে আমরা থামানোর জন্য সিগনাল দিয়েছিলাম। যখন দেখলাম মোটরসাইকেলে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অক্সিজেন মাস্ক পরে রোগী যাচ্ছেন তখন এক সেকেন্ডের জন্যও আর বাধা দেইনি। বরং তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য চেক পোস্ট পার করে দেই।
তাকে বহনকারী মোটরসাইকেলটির পাশে আরও একটি মোটরসাইকেল ছিল। সেটিতেও তাদের স্বজন ছিলেন। মূলত রোগী যেন পড়ে না যান সেজন্য তারা পাশাপাশি চালিয়ে আসছিলেন।
এদিকে ওই নারীর ছেলে জিয়াউল হাসান বলেন, আমার মা যাতে পথে অক্সিজেনের অভাবে বেশি অসুস্থ হয়ে না পড়ে এজন্য তিনি নিজের পিঠের সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে নেন। আর তার মা মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরা ছিলেন।”
তিনি বলেন, পথে ট্রাফিক পুলিশ আমাদের মোটরসাইকেল থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পেছনে অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং মাকে মাস্ক পরা অবস্থায় দেখতে পেয়ে তারা আমাদের আটকে না রেখে নিরাপদে চেক পোস্ট পার করে দেন। পরে দ্রুততার সাথে মা রেহানা পারভীনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সান নিউজ/আরএস