শরীফ ইকবাল রাসেল, (নরসিংদী প্রতিনিধি): বিগত এক বছর যাবৎ দেশে করোনা ভাইরাসের কারণে কঠিন দুর্দিনের মধ্য দিয়ে জীবন কাটছে নরসিংদীর যাত্রা শিল্পের সাথে জড়িত সদস্যদের পরিবার।
দেশে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস সংক্রম শুরু হলে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী লকডাউনের কারণে গণ জমায়েত নিষিদ্ধ হওয়ার আওতায় বন্ধ হয়ে যায় যাত্রা শিল্প। এর ফলে যাত্রা শিল্পের সাথে জড়িত নরসিংদীর প্রায় শতাধিক পরিবারে নেমে আসে দুর্দিন। বন্ধ হয়ে যায় তাদের আয়ের প্রধান পথ। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে না পেরে এদের কেউ কেউ অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এদের বড় একটি অংশ এখনো অভাবের মধ্য দিয়েই দিন পার করছেন।
নরসিংদীতে যাত্রা শিল্পের সাথে জড়িতদের একটি বড় অংশ বসবাস করে থাকে নরসিংদীর ভেলানগর এলাকায়। জেলার শুধুমাত্র ভেলানগরেই রয়েছে ৪১টি পরিবার। তাদের মধ্যে প্রবীণ শিল্পীরা এখন অসুস্থ্যতার কারণে ঘরে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়ে একটু ওষুধ খাওয়ার পয়সাও পাচ্ছেনা। তাদের মধ্যে দিপ্তী রানী ও জাহানারা বেগম উল্লখযোগ্য। তাদের ছেলে মেয়েরা কোনমতে খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করছে।
এছাড়া যাত্রা শিল্পের নায়কখ্যাত ইকবাল এখন পেটের দায়ে ইজিবাইক চালাচ্ছেন, আর আমির হোসেন ভেলানগর বাজারে লেবু বিক্রি করছেন। এই দিয়েই কোন রকমে পরিবার পরিজন নিয়ে চলছেন তারা।
ভেলানগর বাজারে যাত্রাশিল্পের সরঞ্জাম ভাড়া দিয়ে সংসার চালায় এমন অর্ধডজন সাজ বিপনী দোকান রয়েছে। যারমধ্যে এই এক বছরে মাত্র দুটি ছাড়া সবকটি দোকান ঘুছিয়ে নিয়েছেন। এমনই একটি দোকান লোকনাথ সাজ বিতান। এই দোকানের মালিক নুরুল ইসলাম স্বদেশ। করোনার কারনে দোকান বন্ধ তাই বাড়িতেই পরিবারের সাথে সময় কাটান তিনি। তারমতো ভাই ভাই সাজ বিতানের মালিক মরম আলীরও একই অবস্থা। করোনায় যাত্রা শিল্প বন্ধ হওয়ায় দোকান বন্ধ করে বসে থাকা ছাড়া কিছুই করেন না তিনি। ফলে একদিকে দোকান ভাড়া অন্যদিকে পরিবার বাঁচানোর চিন্তায় চিন্তিত তিনি। তাদের একটাই দাবি যেহেতু তাদের এই পেশা ছাড়া আর কোন পেশা নাই। তাই তাদেরকে অর্থসহায়তার মাধ্যমে পুর্ণবাসন করা হোক। তা না হলে এভাবে অনাহারে অর্ধাহারে আর কয়দিন? এছাড়া বর্তমান সময়ে দ্রুত খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
নরসিংদী জেলা যাত্রাশিল্পী সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল মজিদ জানান, জেলার প্রায় শতাধিক পরিবারের প্রায় তিন শতাধিক সদস্য এ শিল্পের সাথে সরাসরি জড়িত। কিন্তু দেশে করোনা মহামারিতে এ শিল্পে ধস নেমে এসেছে। এর ফলে অনেকেই খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। করোনার প্রথমধাপে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন মাত্র বিশজন ব্যক্তিকে পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থসহায়তা দিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপের লকডাউনে দেশের অবস্থা যখন এই তখন তাদের পাশে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন বলে দাবি জানান তিনি ।
যারা বিনোদনের মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দানের জন্য সামাজিক অবস্থাকে তুলে ধরেন তাদের জীবনেই আজ দুর্দশা। তাই এ বিষয়ে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের নজড় কামনা করেন।
যাত্রা শিল্প উন্নয়ন পরিষদ নরসিংদী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আজাদ কালাম জানান, দেশে করোনা ভাইরাসের কারণে একবছর ধরে যাত্রা শিল্প বন্ধ থাকায় এ পেশায় জড়িত ব্যক্তিদের পরিবারের অধিকাংশরা দুর্দিনের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন। আবার কেউ কেউ এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই এবারের লকডাউনে সরকারি সহায়তার মাধ্যমে এই পরিবারগুলোকে বাচাঁনোর অনুরোধ জানান তিনি।
সান নিউজ/আরএস