চট্টগ্রাম ব্যূরো : গত ৫ মাসে আমি ৪ বার সড়ক দূর্ঘটনায় পড়েছি। প্রতিবারই আমাকে বহন করা গাড়িকে পেছন থেকে ধাক্কা মেরেছে। আমি আহত হয়েছি। এগুলো কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এসব ঘটনায় আমি জীবন নিয়ে শংকিত। আমি বাঁচতে চাই, জীবনের নিরাপত্তা চাই।
এমন আকুতি চট্টগ্রাম থেকে অপহরণের শিকার সাংবাদিক গোলাম সরওয়ারের। কিন্তু কেউ কি শুনছেন এই আকুতি? চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বসে সোমবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এমন আকুতি জানান চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) সদস্য, আজকের সূর্য়োদয় এর স্টাফ রির্পোটার ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিটি নিউজ এর নির্বাহী সম্পাদক সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার।
নিউজ পোর্টাল সিটি নিউজে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার। নিখোঁজের চার দিন পর ২ নভেম্বর রবিবার রাত ৮টার দিকে সীতাকুণ্ডের কুমিরার হাজীপাড়া ব্রিজ ঘাট এলাকায় অজ্ঞান অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন। এ সময় তিনি বলতে থাকেন, ভাই আমারে মাইরেন না, আমি আর নিউজ করব না। আমারে ছেড়ে দেন। যা শুনে স্তম্ভিত হয় লোকজন।
এ ঘটনার পর প্রভাবশালী মহল উল্টো তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন। এ মামলায় নিয়মিত আসামি হিসেবে হাজিরা দিতে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার। আর এরমধ্যেই তাকে গাড়ি চাপাসহ নানা উপায়ে হত্যার চেষ্টা করছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তিনি।
অপহরণের পর দ্বিতীয় এই সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তৈরী হওয়া শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমার পারিবারিক শত্রু বার বার আমাকে হত্যার চেষ্ট করছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিগত গত বছর ২৯ ডিসেম্বর দুপুর ১ টার সময় রিকশাযোগে বাসায় ফেরার পথে পাঁচলাইশ থানাধীন বদনাশাহ মাজারের সামনে রাস্তার উপর হঠাৎ পিছন থেকে সিএনজি নং চট্টমেট্রো-থ ১২-৫২৯৪ এর চালক বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে রিকশা উল্টে যায়। আমি ও রিকশা চালক আহত হই। আমার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করিলে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
বিষয়টি আমার দায়ের করা অজ্ঞাত অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনিও তেমন দায়িত্বশীল আচরণ করেননি। বরং উল্টো আমাকে অপহরণ মামলার তদন্ত বিষয়ে সেদিন তার সাথে জরুরি দেখা করতে বলেন। জেএমসেন হলের পাশে অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়িতে সেদিন গেলে তদন্ত কর্মকর্তার আচরণে আমি বিস্মিত এবং তার কথাগুলো শুনে আমি চরম আতঙ্কে রয়েছি এখনো। পরবর্তীতে গত ১৮ মার্চ বিকেল সাড়ে পাচঁটায় নগরীর জামালখান সিনিয়রস ক্লাবের সামনে একটি কালো প্রাইভেটকার ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিলে আমি গুরতর আহত ও রিকশা চালক আহত হয়। উক্ত গাড়িকে লোকজন আটক করতে চাইলে গাড়ির ড্রাইভার দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এভাবে বার বার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গোলাম সরওয়ার আরও বলেন, আমার দায়ের করা ১৫/১১/২০ জি আর ৭৯২/২০ (কেতোয়ালী) মামলার মূল অভিযোগ ছিল সংবাদ প্রকাশের জের ধরে চেতনানাশক দ্রব্যাদি প্রয়োগ করিয়া ৩ দিনের অধিক সময় আটক রাখাসহ চুরি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৬ জনকে আসামি করা হয় । পুলিশ মামলায় বিগত ১০/১২/২০২০ ইংরেজি তারিখ মো. শাহীন ও মো. ইব্রাহীম নামে দুই আসামিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর আসামিগণ বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিন লাভ করে। অত্যন্ত আশ্চর্যজনক বিষয় হল, জামিন হওয়ার পর আসামিগণকে রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার তদন্তকারী র্কমর্কতা ধর্মেন্দু দাশ বিগত ২২/১২/২০ ইংরেজি তারিখে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার এমন ভূমিকা অবশ্যই রহস্যজনক।
গোলাম সরওয়ার বলেন, আমাকে অন্যায়ভাবে অপহরণ করে নির্মম নির্যাতনের পর সংবাদ প্রকাশ করার কারণে বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত চট্টগ্রামে দায়ের করা হয় মানহানি মামলা, মামলা নং সিআর ২১৭০/২০ (কোতায়ালী)। অর্থঋন আদালতে ১৫/২০ নং মামলা করা হয় আমার বিরুদ্ধে। মানহানি মামলা ২টি দায়ের করেন চট্টগ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য জনাব আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
সত্য প্রকাশের অপরাধে আজ আমি নিয়মিত আসামি হিসেবে কোর্টের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। বিচার পাওয়াতো দুরের কথা নিজেই হয়ে গেলাম মামলার আসামি। আমি এবং আমার স্ত্রী, সন্তান আজ মানবেতর জীবন যাপন করছি। কোন অপরাধ না করে নিজের জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সবার মত আমিও বাঁচতে চাই। সুন্দর একটি জীবন চাই। আমার পরিবারের জন্য আমাকে বাঁচতে দিন।
সান নিউজ/আইকে