শরীফ ইকবাল রাসেল, নরসিংদী : নরসিংদী জেলার রায়পুরা চরাঞ্চলের মিষ্টি মধুর বাঙ্গির কদর বেড়েছে সারাদেশে। এর ফলে একদিকে বেড়েছে বাঙ্গির উৎপাদন, অপরদিকে বেড়েছে মৌসমী শ্রমিকের কর্মসংস্থান। আর এই নরসিংদীর সাগরকলা, লটকটন, বোম্বাই লেবুর পর এবার বাঙ্গি দিয়ে পরিচিত হচ্ছে নরসিংদী। মূলত মৌসমী ফল হিসেবে নরসিংদীতে চাষাবাদ হয়ে থাকে এই বাঙ্গি।
গ্রীষ্মের অন্যতম ফলগুলোর মধ্যে বাঙ্গি অন্যতম। গ্রীষ্ম আসার আগেই নরসিংদীর চরাঞ্চলের মাঠে শোভা পাচ্ছে বাঙ্গি। ইতোমধ্যে বাঙ্গি চাষে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠছে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল। এ অঞ্চলের বাঙ্গি আকারে বড়, দেখতে সুন্দর ও সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অল্প শ্রম ও অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে বাঙ্গির চাষ। ফলে এ অঞ্চলে সৃষ্টি হচ্ছে মৌসুমী কর্মসংস্থানের।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল বেষ্টিত বাঁশগাড়ি, শ্রীনগর, চরমধূয়া ও মির্জাচর ইউনিয়নের সর্বত্র বাঙ্গি চাষ হয়ে থাকে। তুলনামূলকভাবে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নেই সবচেয়ে বেশী বাঙ্গির আবাদ হয়ে আসছে। চলতি মৌসুমে রায়পুরার চরাঞ্চলে প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষাবাদ হয়েছে। যা গতবছর হয়েছিল ৩৬ হেক্টর জমিতে। এ বছর বাঙ্গি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১৮ থেকে ২০ মেট্রিক টন।
বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের মধ্যনগর ও চান্দেরকান্দি গ্রামের কৃষকরা তাদের জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বাঙ্গি চাষ করে। শুধু মধ্যনগর বা চান্দেরকান্দি নয় আশপাশের বেশ কয়েকটি চরে বাঙ্গির আবাদ হচ্ছে। এই সকল চরের উৎপাদিত বাঙ্গির আকার বড় ও হলদে রঙের উজ্জ্বল হয়ে থাকে।
বাঁশগাড়ি ও শ্রীনগর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে পলি দ্বারা বিস্তৃত চর। বিস্তৃর্ণ পূর্ব পুরুষদের পদাঙ্ক অনুসরকণ করে চরে ধান জাতীয় ফসলের পাশাপাশি বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। মাটির উপর ছড়িয়ে রয়েছে বাঙ্গিগাছের সবুজ লতা। লতার ফাঁকে ফাঁকে কাঁচা-পাকা বাঙ্গি শোভা পাচ্ছে। জমি থেকেই বাঙ্গি কিনতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারগণ জমিতে ছুটে আসেন। জমিতেই পাইকারগণ দরদাম করে নিয়ে যাচ্ছেন যার যার মতো।
বাঙ্গি চাষিরা জানান, আগে নিজেরা খাওয়ার জন্য অল্প জমিতে বাঙ্গি চাষ করা হতো। পরবর্তীতে এটি লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। যার ফলে বর্তমানে চরের অর্ধেক জমিতেই বাঙ্গি চাষ হয়ে থাকে।
কৃষকরা আরো জানান, বাঙ্গি চাষ করতে তেমন খরচ লাগে না। রসুন ও বাঙ্গি দুই ফসল একবারে যায়। রসুনের জন্য সার দেয়ায় বাঙ্গির জন্য আলাদা করে সার লাগে না। বীজ ও ঔষুধে এবছর দুই বিঘা জমিতে মাত্র ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করা যায় আড়াই লাখেরও বেশি টাকা বিক্রি করা সম্ভব।
বাঙ্গি চাষ শুধু কৃষকদের সমৃদ্ধিই বয়ে আনেন, সৃষ্টি হয়েছে মৌসুমী কর্মসংস্থানের। মৌসুমী শ্রমিকরা জমি থেকে বাঙ্গি ঝুঁড়িতে তুলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নৌকা কিংবা ভ্যানে ভর্তি করে থাকেন। এতে পুরো চরে চোখে পড়ে কৃষক-শ্রমিকের কর্মচঞ্চলতা।
মৌসুমী শ্রমিকরা জানান, বাঙ্গির পুরা মৌসুমে এই গ্রামের কেউ বসে নেই। সকলেই কিছু না কিছু করে জীবিকা চালায়। জমি থেকে প্রতিটি বাঙ্গি ঘাটে নৌকায় বা ভ্যানে বোঝাই করে দিলে ৫ টাকা পায়। এতে প্রতিদিন গড়ে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা মজুরি পায়। আকারভেদে পাইকারী হিসেবে একশ বাঙ্গি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এই এলাকার বাঙ্গি দেখতে সুন্দর, মিষ্টি ও ভালো মানের হওয়ায় ব্রাহ্মনবাড়িয়া, বাঞ্ছারামপুর, যাত্রাবাড়ি, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, সিলেট, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে এই নরসিংদীর মিষ্ট মধুর বাঙ্গি।
রায়পুরার চরাঞ্চলে বাঙ্গি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাঙ্গি চাষ স¤প্রসারণে আমরা সার্বক্ষণিক মাঠ পরিদর্শনসহ কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বীজ কৃষকরা ব্যবহার করে। বাঙ্গি চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও ভাল বীজ সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রায়পুরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বনি আমিন খান।
সান নিউজ/কেটি