নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঙামাটি : কাউখালী-ঘাগড়া ভায়া চেলাছড়া সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। সড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী।
স্থানীয় সরকার ও সড়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনেস্থ স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র অর্থায়নে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকার এই প্রকল্পের কাজ চলছে। সড়কটির কাজে ব্যাপক কারচুপি এবং অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা অনেকেই কাজের মান নিয়ে বিভিন্নভাবে অভিযোগ দিয়েও যে লাউ সে কদু। স্থানীয়রা বলার পরও কাজটি চালু রেখেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএস-এমএম ট্রেডার্স ও স্থানীয় এলজিইডি অফিস।
জানাগেছে, কাজের শুরু থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করে আসছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। নিম্নমানের কাজ হচ্ছে মর্মে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে পত্র দিয়েছেন কাউখালী উপজেলা এলজিইডি অফিস।
স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাউখালী উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলীগণ গত ৯ এপ্রিল কাউখালী-ঘাগড়া ভায়া চেলাছড়া সড়ক নির্মাণে ব্যাপক কারচুপি অভিযুক্ত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে, ঠিকাদারি কাজের সাইডে নিম্নমানের পাথর মওজুদ করেছেন বলে উপজেলা প্রকৌশলীগণ তার প্রমাণ পেয়েছেন। উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারকে কাজের সাইড থেকে নিম্নমানের পাথর ৩ দিনের মধ্য অপসারণ করার জন্য নির্দেশ দেন। একই সাথে উক্ত বিষয়ের আলোকে অবহিত করেন নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডি, রাঙামাটিকে। কিন্তু প্রভাবশালী ঠিকাদার উপজেলা প্রকৌশলীর নির্দেশকে অমান্য করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছেন নির্মাণ কাজ।
কাউখালী উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, কাউখালী-ঘাগড়া ভায়া চেলাছড়া সংযোগ সড়কের ঘাগড়া বাজার মুখ থেকে ২৬০০ মিটার (২.৬ কিলোমিটার) রাস্তায় বক্স কালবার্ট, সিলকোড, প্রয়োজনীয় জায়গায় কাপেডিং, রাস্তা ভাঙ্গন রোধে বন্য প্রতিরোধক ওপেন বক্স কালবার্ট (ভিকালবার্ট) নির্মাণের কার্যাদেশ পায় রাঙামাটি শহরের এসএস-এমএম ট্রেডার্স।
গত শনি ও রবিবার প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কাউখালী-ঘাগড়া ভায়া চেলাছড়া সংযোগ সড়কের জুনুমাছড়া এলাকায় দেখা যায় রাস্তার এল ড্রেন এবং ওপেন বক্স কালবার্টের কাল চলছে। ইতোমধ্যে কাজ শেষে হয়েছে রাস্তার বক্স কালবার্ট এর। এল ড্রেনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের পাথর কংক্রিট ও ইট বালি। নিম্নমানের পাথর সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দেওয়া হলেও এসব দিয়েই কাজ করছে ঠিকাদারের পোষ্য রাজ মিস্ত্রি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের রাজ মিস্ত্রির কাছে তা জানাতে চাইলে রস জবাববে বলেন, এসব দিয়েই কাজ করতে বলেছেন তাদের ঠিকাদার।অজুহাত দিয়ে বলেন, লকডাউনের জন্য ভাল মালামাল বা নিম্নমান সামগ্রী আনতে পারছে না তাই।
ওই এলাকার একটু দূরে রাস্তা ভাঙন রোধে চলছে ওপেন বক্স কালবার্ট নির্মাণের কাজ। তারই পাশে বড় বড় ২টি স্থানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে নিম্নমানের পাথর। ওই স্থানে কথা হয় কাজের মাঝি পরিচয় দেওয়া মো. বাচ্চু ও হান্নানের সাথে। এ পাথর কি স্থানীয় নাকি সিলেট থেকে আনা জবাবে তারা বলেন, স্থানীয় লকডাউনের জন্য সিলেট থেকে আনা হয়নি। দায়-ভার সারাতে অন্য একজন বলেন, সিলেট থেকে এই পাথর পাঠিয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লেবাররা ও নয়ছয় কথা বলছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. জসিম জানান, এসব মালামাল সামগ্রী কি আমরা তৈরি করি। কোন কারণে মালামাল সামগ্রী খারাপ আসতেই পারে। কাউখালী উপজেলা এলজিইডি অফিস থেকে যেহেতু বলছেন নিম্নমানের পাথর ব্যবহার হচ্ছে তাই ওই পাথর আমরা সরিয়ে ফেলেছি। কেউতো আর ইচ্ছে করে খারাপ মালামাল কাজে ব্যবহার করেনি।
ঠিকাদার জসিম আরও বলেন, আমি যদি ৮ টাকা দিয়ে মাল কিনতে পারি তাহলে সেটা কি সাড়ে ৮ টাকা দিয়ে কিনে আনতে পারব না। আমারও তো বিলগুলো তুলতে হবে। জোর করে কাজ আদায় করারতো কোন সুযোগ নেই। নিম্নমানের পাথর সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও দেখা গেছে তা রয়ে গেছে। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তাই কোন ক্রমেই খারাপ মালামাল ব্যবহার করা হবে না।
কাউখালী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) পরিতোষ চন্দ্র রায় জানান, এ নিয়ে দুইবার নিম্নমানের মালামাল অপসারণের জন্য চিঠি দিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। এরপরও যদি ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণ সমাগ্রী দিয়ে কাজ করে সে ক্ষেত্রে পদেক্ষপ কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী বলেন, বিষয়টি যেহেতেু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি সে ব্যাপারে উনারাই সিদ্ধান্ত নিবেন। ঠিকাদারকে দেওয়া ২য় চিঠিতে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ধর্ম মোহন চাকমা ও অমর বিকাশ চাকমা (এল.কে.এস.এস)’কে প্রকল্প থেকে নিম্নমানের মালামাল অপসারণ পূর্বক প্রতিটি কাষ্টিং এ স্বশরীরে উপস্থিত থেকে কার্য সম্পাদন করার নির্দেশ দেন উপজেলা প্রকৌশলী। তবে এত কিছু করার পরও কোন কিছুই তোয়াক্কা করছেন না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক জসিম। কর্তৃপক্ষও জানেন না তার খুঁটির জোর কোথায়।
সান নিউজ/কে/কেটি