নিজস্ব প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে প্রশান্ত দেবনাথ নামে এক শিক্ষার্থী দরিদ্র পিতামাতার সংসারে জন্ম নিলেও কঠোর অধ্যবসায় দিয়ে ইতোমধ্যে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এতে এলাকার মানুষ তাকে নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করলেও পরিবারের লোকজন রয়েছে চরম হতাশায়। কারণ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ও নিয়মিত খরচ চালানোর ক্ষমতা নেই ফেরিওয়ালা পিতার।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়নের কেশুরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর বির্ষম দেবনাথের ছেলে প্রশান্ত দেবনাথ। বাবা মায়ের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় সন্তান প্রশান্ত।
নিজের মনোবল, কঠোর অধ্যবসায় দিয়ে সে এবার ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে হতদরিদ্র দিনমুজুরের ছেলে প্রশান্ত। ভর্তি পরীক্ষায় সে ১০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ৬৮.২৫ নম্বর।
বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে সে এলাকার মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে এলাকার নারী পুরুষ সবাই খুশি। ছুটছেন তাকে একনজর দেখার জন্য।
তার এই সাফল্যে এলাকায় সকল শ্রেণীর মানুষের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। কিন্তু আনন্দের মাঝেও পবাবা মায়ের মনে অজানা কষ্ট বাসা বেধেছে।
প্রশান্তের মা দ্বিপি রানী দেবনাথ বলেন, ছেলেকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করাতে কত টাকা লাগবে জানি না। লোকমুখে শুনেছি ভর্তি হতে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। কিন্তু এত টাকা আমরা গরিব মানুষ কোথায় পাব?
তিনি আরো বলেন, একসময় আমরা তাঁতের কাজ করতাম। কিন্তু লোকসান গুনতে গুনতে পুঁজি হারিয়ে ফেলেছি। এখন ওর বাবা গ্রামে ফেররি করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে।কলেজে ভর্তির খরচ কিভাবে বহন করব এই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
প্রশান্ত দেবনাথ বলেন, ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিলো ভাল কলেজে লেখাপড়া করার। এজন্য নিরলস পরিশ্রম করে গেছি। বাবা মায়ের ইচ্ছা ছিল আমাকে ডাক্তার বানানোর। আমি তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। আমার বাবার আর্থিক অবস্থা ভাল না। এমনও দিন গেছে আমি না খেয়ে অনেক দিন কাটিয়েছি। যেখানে খাওয়ার টাকা দিতেই পরিবারের স্বজনদের কষ্ট হতো সেখানে প্রাইভেট পড়ানোর মতো টাকা দিতে পারত না। আমার কলেজের শিক্ষকরা আমার পারিবারিক কষ্টের কথা জেনে অনেকে সাহায্য করেছে।
সে আরো বলে, আমার মামার অবদান ভুলার নয়। গতবছর করোনার সময় অনলাইনে ক্লাস করার মতো আমার ল্যাপটপ বা মোবাইল ছিল না। আমার মামা আমাকে ফোন কিনে দিয়ে সাহায্য করেছে।
বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য রাতদিন পড়তে হয়েছে। পড়তে পড়তে অনেকদিন সকাল হয়ে গেছে মসজিদে আজাদ হওয়ার পর অনেকদিন ঘুমুতে যায়। সে এলাকার কদম রসুল স্কুল থেকে এসএসসি পাস এবং দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদিনসহ কয়েকজন বলেন, প্রশান্তের অভাবনীয় সাফল্যে আমরা এলাকার মানুষ খুশি। একজন দরিদ্র পিতার ছেলে মেডিক্যালে পড়ার সুযোগ পেয়েছে এঠা ভাবতেও আনন্দ লাগে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রভাত কুমার সিংহ বলেন, আমার এলাকার একজন দিনমজুরের ছেলে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে জেনে আমরা সকলে পুলকিত। সে বড়গাঁও ইউনিয়ন বাসির গর্ব। তার লেখাপড়ার খরচ চালাতে এলাকার ধর্নাঢ্য লোকজন এগিয়ে আসবেন এই প্রত্যাশা জানাচ্ছি।
জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, এ বছর ঠাকুরগাঁও জেলার বেশকিছু শিক্ষার্থী সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। জেলার মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করে আসছি। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের কোন মেধাবী শিক্ষার্থী অর্থাভাবে যাতে ঝরে না পড়ে সে ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন সকল প্রকার সহযোগিতা দিয়ে থাকে।
সান নিউজ/বি/কেটি