নিজস্ব প্রতিনিধি, নাটোর : নাটোরে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধানের শীষ সাদা হয়ে চিটায় পরিণত হয়েছে। এতে চরম হতাশা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগের কাছে নতুন এই রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের মতে, কয়েক দিন আগে ঝড়ো হওয়া, বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধির কারণে আগাম জাতের ধানে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ছাতনি ইউনিয়নের কানুসগাড়ি বিলের ধান চাষি আব্দুর রহিম জানান, ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। কিন্তু শীষ মরে যাওয়ায় আমরা চরম দুশ্চিন্তায় আছি। কি করলে এর প্রতীকার হবে তা জানা নেই এই কৃষকসহ এই বিলে ধান চাষিদের। তবে বিগত কোন বছরে এমন সমস্যার সম্মুখীন হননি বলে জানান তারা।
নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ই্উনিয়নের কৃষক সামাদ আলী জানান, যে হারে শীষ মরে চিটা হয়ে গেছে তাতে বিঘা প্রতি ধানের ফলন অর্ধেকে নেমে আসবে। নাটোরের হালসা এলাকা মাঠের পর মাঠ জমিতে ধানের শীষ সাদা হয়ে মরে আছে দেখা যায়।
কৃষক আব্দুস সাত্তারের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, তিন বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছি। ধানের অবস্থা দেখে খুব খুশি ছিলাম। হঠাৎ করে শীষ বাড়ানোর সময় সাদা হয়ে চিটা হয়ে গেছে জমির অর্ধেকের বেশি ধান। কেন এমন হল তা নিয়ে চরম চিন্তায় আছি। তবে পানি সঙ্কটের কারণে হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে, গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের তুলাধুনা বিলে কৃষক আক্কাস আলী জানান, ৭ বিঘা জমিতে বোর ধান চাষ করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে যে হারে শীষ মরে চিটায় পরিণত হয়েছে তাতে উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হবে।
নাটোর সদর উপজেলার পন্ডিত গ্রামের ২৫০ কৃষকের ৪০০ বিঘা জমির ধানের একই অবস্থা। এসব জমির ধানে ঠিকমত পরাগায়ন না হওয়ায় চিটাসহ ঘূর্ণঝড়ে ধান পড়ে গেচে।
নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম নিজেও ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন।
নাটোর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এভাবে শীষ মরে ধান চিটায় পরিণত হওযার ঘটনা আগে কখনও নাটোরে দেখা যায়নি। তবে গেল কয়েক দিন আগে ঝড়ো হওয়া, বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধির কারণে আগাম জাতের ধানে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরাগায়নের সময় ঝড়ো বাতাস ও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে পরাগায়ন ব্যাহত হওয়া এমন হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি। এ সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষি বিভাগের কর্মীরা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য জমিতে পানি ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা ধান গবেষণার সাথে যোগাযোগ করে নমুনা সরবরাহ করেছি।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।
সান নিউজ/এসএস/কেটি