নিজস্ব প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের বিশাল হাওর এলাকার কৃষিজীবী জনগোষ্ঠির বছরের একমাত্র ফসল বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু কৃষকের মনে হাসি নেই। কারণ সম্প্রতি কিছুক্ষণের আচমকা গরম বাতাসের ঝড়ো প্রবাহের কারণে বিপুল পরিমাণ বোরো ফসল নষ্ট হওয়ায় অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে কৃষকের মনে ভর করেছে শংকার কালো মেঘ।
কিশোরগঞ্জের জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার বেশীর ভাগ অংশই আবাদ হয়েছে জেলার পাঁচটি হাওর উপজেলাসহ অন্যান্য আংশিক হাওর এলাকায়। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে বছরের প্রায় ছয় মাস নিমজ্জিত থাকে হাওর এলাকা। বাকি সময়ে হাওর উপজেলায় শুধু মাত্র বোরো ধানের চাষ হওয়ায় এ ফসল দ্বারাই পুরো বছরের অন্ন সংস্থানসহ যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন কৃষকরা।
চলতি বছরে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের ভালো ফলন নিয়ে আশান্বিত ছিলেন হাওরের কৃষক ও কৃষিবিদরা। কৃষকরাও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ধান কাটা শুরু করার। কিন্তু চলতি এপ্রিল মাসের ৪ তারিখ সন্ধ্যার পর টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এ সময় তাপমাত্রা উঠে ৩৪ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের উপরে। বয়ে যাওয়া প্রচণ্ড গরম তাপমাত্রার কারণে ফলে বোরো ধানের প্রস্ফুটিত শীষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নষ্ট হয়ে চিটায় পরিণত হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাবে এ কারণে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বছরের একমাত্র ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখছেন হাওরের কৃষক। কারণ, অন্ন সংস্থানসহ হাওর এলাকার কৃষকরা বছরের এই একটি মাত্র ফসলের উপর পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-জীবিকার উপর নির্ভরশীল থাকেন। তাই গত দু’একদিন ধরে হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হলেও কৃষকের মনে আনন্দ নেই, দুশ্চিন্তার কালো মেঘ জমে আছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. তাজ উদ্দিনের মতে, গরম বাতাসে তার এলাকার প্রায় ৬০ ভাগ নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
গরম বাতাসে ফসল বিনষ্ট হওয়ায় হাওরের কৃষকরা চরমে দুর্ভোগে পড়েছেন বিধায় তাদের দুর্দাশা লাঘবে ভিজিএফ সহায়তা কর্মসূচির চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশীদ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানিয়েছেন, খবর পেয়ে ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে এসে কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। তাদের নির্দেশক্রমে ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপণসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পরবর্তীতে সে তালিকার ভিত্তিতে কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যত দ্রুত সম্ভব সরকারি পদক্ষেপ কামনা করছেন হাওর এলাকার সাধারণ মানুষ।
সান নিউজ/এমকে/কেটি