নিজস্ব প্রতিনিধি, পাবনা: যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একই পরিবারের ৬ জনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় বাংলাদেশের পাবনায় নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের মাঝে চলছে শোকের মাতম।
সোমবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাতটার দিকে তারা মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। আর মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সকালে এই খবর জানাজানি হলে নিস্তব্ধতা নেমে আসে পাবনা শহরের দোহারপাড়ায় এলাকায়।
সকাল থেকেই নিহতদের স্বজন ও বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীরা পাবনার গ্রামের বাড়িতে ভিড় জমায়। স্বজনদের শান্তনা দেবার চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। স্বজনরা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না এই লোমহর্ষক হৃদয়বিদারক ঘটনার।
মঙ্গলবার বিকেলে দোহারপাড়া এলাকার নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে সুনশান নিরবতা। যেন শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়। দোতলা বাড়িটিতে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন নিহত আলতাফুন্নেসার ছেলে ও স্বজনরা। বাড়ির চত্বরে বসে আছেন প্রতিবেশিসহ অনেকেই।
এ বিষয়ে কথা হয় নিহত আলতাফুন্নেসার ছেলে আরিফুর রহমান আলিফ ও আবুল কালাম আজাদ হিরোকের সাথে। তারা জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আমেরিকায় স্ব-পরিবারে বসবাস করেন সিটি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট তৌহিদুল ইসলাম। স্ত্রী আইরিন ইসলাম ওরফে নীলা তৌহিদ, তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে তানভীর তাওহীদ ও জমজ ভাইবোন ফারহান তৌহিদ ও ফারবিন তৌহিদকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছিলেন। তৌহিদুল ইসলামের শাশুড়ি অর্থাৎ আইরিন ইসলামের বৃদ্ধা মা আলতাফুন্নেসাও তাদের সঙ্গে টেক্সাসে ছিলেন।
আরিফুর রহমান আলিফ জানান, গত ২ এপ্রিল রাতে তার মা আলতাফুন্নেসার সাথে তাদের মোবাইলে শেষ কথা হয়। এরপর থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। গত ১ এপ্রিল পাবনায় ফেরার কথা ছিল আলতাফুন্নেসার। করোনার কারণে সেই ফ্লাইট বাতিল হয়ে পরবর্তিতে ৭ এপ্রিল দেশে আসার দিন ঠিক হয়। কিন্তু তার আগেই নৃশংসভাবে খুনের শিকার হলেন তার মাসহ সবাই।
আবুল কালাম আজাদ হিরোক জানান, পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় আইরিন ইসলাম। ২০০৮ সাল থেকে তার মা আমেরিকায় মেয়ের বাড়িতে যাতায়াত করছেন। ২০১৯ সালে তিনি সর্বশেষ আমেরিকায় গিয়ে সেখানেই অবস্থান করছেন। ২০১২ সালে তার বোন আইরিন ইসলাম সর্বশেষ দেশে এসেছিলেন। আজ আকস্মিকভাবে পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা।
আইরিন ইসলামের দুই ভাই আরিফুর রহমান আলিফ ও আবুল কালাম আজাদ হিরোক বলেন, তাদের ভাগ্নে ও ভাগ্নী অসম্ভব রকমের মেধাবী ছিল। ৩ বছর আগে তানভীর তৌহিদ ও এক বছর আগে ফারহান তৌহিদ অস্টিন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। আর ফারহানের জমজ বোন ফারবিন তৌহিদ এক বছর আগে এনওয়াই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। তারা সবাই স্কলারশিপ নিয়ে এসব নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। যে কেউ সেখানে পড়ালেখার সুযোগ পায় না। তাহলে তাদের মানষিক বিকারগ্রস্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে কেন আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। আমরা কখনই তাদের মধ্যে এমন কোনো লক্ষন দেখতে পাইনি। তারা তাদের বাবা-মা, বোন, নানীকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছে এটা মেনে নিতে পারছি না। এর মধ্যে অন্য কোনো ঘটনা রয়েছে। আমরা চাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হত্যার প্রকৃত রহস্য সেদেশের পুলিশ উদঘাটন করুক। আর তাদের মরদেহ দেশে এনে দাফনের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
প্রতিবেশি ইনামুল হক, শহিদুর রহমান শহিদ, জিয়াউর রহমানসহ অনেকে জানান, তাদের পরিবারকে খুব ভাল জানি আমরা। ছেলে, মেয়ে, নাতী কারো সম্পর্কে খারাপ কিছু শুনিনি। এমন মৃত্যু আমাদের কাছে কাম্য নয়। তাদের স্বান্তনা দেবার ভাষা নেই। তারপরও আমরা পরিবারটির পাশে আছি। আমরা চাই ঘটনার তদন্ত হোক। প্রকৃত কারণ জানতে পারলে সবাই মনকে শান্তনা দিতে পারবে।
উল্লেখ্য, সোমবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে নিজ বাসা থেকে ৬ জনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ। তারা হলেন, তৌহিদুল ইসলাম, তার স্ত্রী আইরিন ইসলাম ওরফে নীলা তৌহিদ, তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে তানভীর তাওহীদ, ও জমজ ভাইবোন ফারহান তৌহিদ ও ফারবিন তৌহিদ এবং তৌহিদুল ইসলামের শাশুড়ি অর্থাৎ আইরিন ইসলামের বৃদ্ধা মা আলতাফুন্নেসা। পুলিশের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে শনিবার কোনো এক সময় দুই ছেলে সবাইকে হত্যা করে নিজেরা আত্মহত্যা করেছে।
সান নিউজ/এসআর/কেটি