নিজস্ব প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী অঞ্চলের প্রায় ৪০টি পোশাক কারখানা গ্যাস সঙ্কটের কারণে বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে এবং পাশাপাশি দুই অঞ্চলে আরও শতাধিক শিল্প-কারখানা।
কারখানা মালিকদের অভিযোগ, প্রায় এক মাস ধরে গ্যাসের তীব্র সংকট চললেও সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এজন্য গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) ও তিতাসের সমন্বয়হীনতাকেও দায়ী করছেন শিল্প-কারখানা কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত ১৩ মার্চ থেকে শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদীর মাধবদীতে প্রথম গ্যাস সংকট দেখা দেয়।
এইদিন থেকেই এ দুটি এলাকার বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করে। এরই মধ্যে মিথিলা গ্রুপ, গাজী গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, এনজেড গ্রুপ, রবিনটেক্স গ্রুপ, ফকির গ্রুপ, এসপি কেমিক্যাল, নান্নু স্পিনিং, ভাই ভাই স্পিনিং, সানজানা ফ্যাব্রিক্স, সিম ফ্যাব্রিক্স, পদ্মা ব্লিচিংসহ মোট ৪০টি বস্ত্র কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
বিদ্যমান গ্যাস সংকট সমাধান না হলে আরও শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, কাঁচপুর পয়েন্টে হরিপুর গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির গ্যাস রেগুলেশন এন্ড ট্রান্সমিশন সেন্টার থেকে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের মেইন ট্রান্সমিশন লাইন হয়ে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস উড়ে যাচ্ছে। ফলে নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর শত শত শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংকট দেখা দেয়।
হরিপুর পয়েন্টের গ্যাস ভাল্ব লিকেজ হওয়ার কারণেই এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। লিক সারানোর জন্য ব্যবসায়ী নেতা ও কারখানা মালিকরা বারবার তিতাসের শরণাপন্ন হয়েও কোনও সমাধান পাননি। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের কাছে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে জিটিসিএলের কাছে যেতে বলে।
জিটিসিএলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে বলা হয়, গ্যাসের সঙ্গে প্রচুর ময়লা আসছে, এ কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে। গ্যাস পাইপের ভাল্ব এবং ফিল্টারিংয়ের সমস্যার কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন জিটিসিএলের কর্মকর্তারা। পাইপে ছিদ্র থাকার ফলে প্রচুর গ্যাস উড়ে যাচ্ছে।
এছাড়া হরিপুর পয়েন্টে যেকোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনারও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া পোশাক কারখানার মালিকরা বলছেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর ঘিরে তারা ব্যস্ত সময় পার করেন। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আগামী দিনগুলোতে বড় ধরনের ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
এদিকে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা না গেলে আসছে ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়ার বিষয়টিও ঝুঁকিতে পড়বে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মনসুর আহমদ বলেন, ‘চলমান গ্যাস সমস্যার কারণে নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বর্তমানে চরম আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক এরই মধ্যে বেকার হয়ে পড়েছেন।
এ অবস্থা চলতে থাকলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, পেট্রোবাংলা এবং তিতাসের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণেই এ সংকট তৈরি হয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে রফতানি বাণিজ্য, শ্রমিক-কর্মচারীর রুটিরুজির বিষয়ও জড়িত।’
সিদ্ধিরগঞ্জ-গোদনাইল আরএমএস এবং গোদনাইল টিবিএস এ কয়েকটি ভাল্বে লিকেজ সমস্যা দ্রুত সমাধানে আশ্বাস দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ দ্রুত স্বাভাবিক করতে তিতাস কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
গ্যাস সরবরাহ বিঘ্ন হওয়ায় গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ভাল্ব প্রতিস্থাপনের কাজ স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে। লিকেজের পাশাপাশি সার্বিকভাবেই গ্যাসের জোগানে ঘাটতির কথা জানিয়েছেন তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আলী ইকবাল মো. নূরুল্লাহ্।
তিনি বলেন, গ্যাস সংকটের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছেও অভিযোগ করছেন। আসলে সার্বিকভাবে চাহিদার তুলনায় অনেক কম গ্যাস জোগান দেওয়া হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সরবরাহের ক্ষেত্রেও। তবে সংকট বিবেচনায় নিয়ে কীভাবে গ্যাসের জোগান বাড়ানো যায়, আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি। খুব দ্রুতই এ সংকট সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী।
সান নিউজ/এসএ