নিজস্ব প্রতিনিধি, নরসিংদী : নরসিংদীর পলাশে যৌতুকের জন্য স্বামীর হাতে প্রাণ দিতে হলো শিল্পী রানী শীল নামে এক নববধূকে। সোমবার (৫ এপ্রিল) ভোরে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের ছোট লক্ষীপুর গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
ঘটনার পর খবর পেয়ে সকালে পলাশ থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করেন এবং এ ঘটনায় নিহত শিল্পী রানীর স্বামী শ্যামল চন্দ্র শীল ও তার পিতা বিমল চন্দ্র শীলকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পলাশ থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে।
পলাশ থানা সূত্রে ও প্রতিবেশীরা জানান, নিহত শিল্পী রানী দাস ও তার স্বামী শ্যামল চন্দ্র শীল পারিবারিকভাবে কিছুটা আত্মীয়। সেই সুবাধে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে শিল্পী রানীর পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই দুর্বল হওয়ায় পলাশের শ্যামলের বাড়িতেই সামাজিক আনুষ্ঠানিকতার মাধমে তাদের বিয়ে হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং গ্রামের প্রদিপ চন্দ্র দাসের মেয়ে শিল্পী রানী দাস।
গত ২১ ফেব্রুয়ারির দিন পলাম উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের ছোট লক্ষীপুর গ্রামের বিমল চন্দ্র শীলের ছেলে শ্যামল চন্দ্র শীলের সঙ্গে বিয়ে হয় শিল্পীর। বিয়ের সময় ছেলের পরিবারকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা ও এক ভরি স্বর্ণালংকার যৌতুক হিসেবে দেওয়ার কথা ছিল মেয়ের পরিবারের। কিন্তু মেয়ের পরিবার বিয়ের আগের দিন ছেলে পক্ষকে এক লাখ টাকা ও আধাভরি স্বর্ণালংকার দিতে সক্ষম হলেও বাকি আধাভরি স্বর্ণ ও ১০ হাজার টাকা দিতে ব্যর্থ হয়।
আর এ কারণেই বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু হয় নববধূ শিল্পীর উপর অমানসিক স্টিম রুলার। শুরু হয় বর্বর নির্যাতন। এভাবে নির্যাতনের কথা শিল্পী তার পরিবারের কাছে জানায়। পরবর্তীতের শিল্পীর পরিবার মেয়েকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে বাকি ১০ হাজার টাকা ও আধাভরি স্বর্ণালঙ্কার ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধের আশ্বাস দেন। কিন্তু তার আগেই স্বামী শ্যামল শীল ও তার পরিবারের সদস্যরা নববধূ শিল্পী রানী দাসকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিল্পীল বড় ভাই শুভ চন্দ্র দাস।
সোমবার বিকালে পলাশ থানা পুলিশ নববধূ শিল্পী রানীর লাশ স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। এই ঘটনায় সোমবার রাতে নববধূর ভাই শুভ চন্দ্র দাস বাদী হয়ে শ্যামল শীল ও শ্বশুর বিমল শীলকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার সকালে অভিযুক্ত শ্যামল ও বিমলকে গ্রেপ্তার করেছে।
এ বিষয়ে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নাসির উদ্দীন জানান, নিহত শিল্পী রানীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। মামলার পর অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত স্বামী শ্যামল ও শ্বশুর বিমলকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করা যাবে।
সান নিউজ/এসআই/কেটি