নিজস্ব প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সকল নাগরিক সেবা বন্ধ। ৭ দিন ধরে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ না করায় ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। নাক চেপে চলছে শহরের মানুষ।
গত রোববার হেফাজতের হরতাল চলাকালে হামলা হয় পৌরসভায়। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের পর চালানো হয় লুটপাট। এতে পৌরসভার সবকিছু নিঃশ্বেষ হয়ে যায়।
পৌরসভার সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ময়লা যে সরাবে সেই বেলচা পর্যন্ত লুট হয়েছে। ঝাড়ু, টুকরি, শাবল, গামবুট, ব্লিচিং পাউডারের ড্রাম কোনো কিছুই নেই। গার্ভেজ ট্রাক-ট্রলি ভাঙচুর-ধ্বংস করা হয়েছে।
৩শ’ পোর্টেবল মোবাইল ডাস্টবিন, ২শ’ পোর্টেবল হ্যান্ড ট্রলি ও ২০টি রিকশা-ভ্যান পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে ময়লা-আবর্জনা অপসারনের কাজ বন্ধ। সবমিলিয়ে পৌরসভার ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। কোনো কার্যক্রম চালানোর মতো ব্যবস্থাই নেই।
পৌরসভা সূত্র জানায়, স্বাধীনতা দিবসে প্রথম হামলা হয় পৌরসভার বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে। সেখানে থাকা বঙ্গবন্ধুর ৩টি ম্যুরাল ভাঙচুর ছাড়াও স্কয়ারের ফোয়ারায় থাকা ৯টি সাবমার্সিবল পাম্প আগুনে পোড়ানো হয়। পৌর মুক্তমঞ্চের গ্রানাইট পাথর, ৫০টি বৈদ্যুতিক খুটি, ২০টি ফ্লাড লাইট ভাঙচুর করা হয়।
২৮ মার্চ হরতাল চলাকালে হামলা হয় পৌরভবনে। ভাঙচুর-লুটপাটের পর আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় সেখানে। এতে ৪ তলা বিশিষ্ট পুরো পৌরভবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পৌরভবনের আসবাবপত্র বলতে কোনো কিছু নেই। আগুনে ছাই হয়ে গেছে সব রেকর্ডপত্র।
ক্ষয়ক্ষতির বিবরণে পৌর কর্মকর্তারা জানান, ২০টি স্টিলের আলমারি, ২৫টি কাঠের আলমারি, ১৮টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, ৫টি ল্যাপটপ, ৪টি ফটোকপিয়ার মেশিন, ৩৪টি টেবিল, ৭টি সেক্রেটরিয়েট টেবিল, ১১৫টি চেয়ার, ২টনের এসি ৫টি, স্বাস্থ্য শাখার ১২টি ড্রিপ ফ্রিজ, ৪টি সাধারণ ফ্রিজ, ভ্যাকসিন, সিলিং ফ্যান, স্টোরে রক্ষিত ১০ হাজার এলইডি বাতি, ৩ হাজার বাতি সেড, ৫০ কয়েল বৈদ্যুতিক তার, বিভিন্ন ধরনের ১৬টি গাড়ি, ইক্যুয়েপমেন্ট চেইন ডোজার ১টি, রোড রোলার ৩টি, ১টি মশক নিধন গাড়ি, হাইড্রোলিক বীম লিফটার ১টি, ভেকুটেক ১টি, এক্সাভেটর ১টি, হাইড্রোলিক ড্রিলিং মেশিন ১টি, ঘাস কাটার মেশিন ২টি, মিকচার মেশিন ৩টি, ভাইবেটর ২টি ভাঙচুর ও আগুনে পোড়ানো হয়।
এছাড়া ভাণ্ডারে রক্ষিত যানবাহনের খুচরো যন্ত্রাংশ, সংরক্ষণ শাখার মালামাল, স্টেশনারি মালামাল, বাড়ির প্ল্যান অনুমোদনের পে-অর্ডারসহ নথি, চেক রেজিস্ট্রার, ইস্যু রেজিস্ট্রার, ক্যাশবই, অ্যাসেট রেজিষ্টার, সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত নথি ও সার্ভিস বই, সকল রেজিষ্টার, বিভিন্ন ডকুমেন্টস, ঠিকাদারের বিল-জামানতের নথিসহ বিভিন্ন মালামাল আগুনে পুড়ে গেছে বলে জানান তারা।
পৌরসভার সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খা পৌর মিলনায়তন আগুনে ভষ্মীভুত হয়েছে। মিলনায়তনের ৫শ চেয়ার, ২০সেট সোফা, ২০টি ৫টনের এসি, ১০টি ২টনের এসি এবং ১৫০টি সিলিং ফ্যান আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দেড়শো বছরের পুরনো এই পৌরসভা এখন নাম সর্বস্ব।
পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির বলেন, হেফাজতের স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মী, বিএনপি-জমায়াত এবং সদ্য অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে আমার দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিয়ে এই হামলা চালিয়েছে।
তিনি জানান, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে হামলা হয়। সেসময় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি শাবল দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। গান পাউডার ও পেট্রোল ঢেলে পৌরভবনের সবকিছু জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। হামলার সময় ভীত সন্ত্রস্ত পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পার্শ্ববর্তী সুইপার কলোনিতে পালিয়ে জীবন বাচাঁন। এতে আমাদের শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার বাসভবনেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। সেখানে নিচতলায় থাকা একটি ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরের মালামাল লুট করে নেয়া হয়। ফলে পৌরসভার পক্ষ থেকে কোনো রকম নাগরিক সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সান নিউজ/আরআই