খান রুবেল, বরিশাল : করোনা মহামারিতে লোকসানে পড়া কৃষকের স্বপ্ন পূরণ করেছে মৌসুমি ফল তরমুজ। কারণ চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে তরমুজের বাম্পার ফলন বিগত কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। আবার আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় তরমুজ ক্ষেতে ক্ষতিও হয়নি। এমনকি দামও পাচ্ছেন চাহিদানুযায়। সব মিলিয়ে করোনা মহামারির মধ্যেও হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল খামার বাড়ি সূত্রে জানা গেছে, ‘বিগত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি খাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বেশিরভাগ চাষি অর্থ সংকটের পাশাপাশি নানা সংকটের কারণে তরমুজ চাষে বাধাগ্রস্ত হন। এতে ব্যাপক লোকসানে পড়তে হয় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের।
তবে চলতি মৌসুমে তরমুজের বাম্পার ফলন কৃষকের ক্ষতি পূরণে সহায়ক হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এবং কৃষকরা। তারা বলছেন, এ বছর দেশে যে তরমুজ উৎপাদন হয়েছে তার ৬০ শতাংশ উৎপাদন হয়েছে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায়।
খামার বাড়ির তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় মোট ২৪ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে তরমুজ উদপাদন হয়েছে। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে পটুয়াখালী জেলায়। এ জেলায় ১৪ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমিতে তরমুজের ফলন হয়েছে। গত বছরের থেকে এ বছর পটুয়াখালী জেলায় কিছু কম জমিতে তরমুজের আবাদ হলেও ফলন গত বছরের থেকে দ্বিগুন হয়েছে দাবি কৃষি বিভাগের।
এদিকে, ‘পটুয়াখালী জেলার বাইরেও বাকি পাঁচটি জেলায় কম-বেশি তরমুজের ফলন হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ৪৬৩ হেক্টর, পিরোজপুর জেলায় ১৪৮ হেক্টর, ঝালকাঠি জেলায় ৩৫ হেক্টর, বরগুনা জেলায় ৪ হাজার ৪৩ হেক্টর এবং ভোলা জেলায় ৫ হাজার ৫৫৬ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।
যদিও এখন পর্যন্ত তরমুজ উৎপাদনের হার নিশ্চিত হতে পারেনি কৃষি বিভাগ। তারা বলছেন বিভাগের মোট ২৪ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমির মধ্যে ১৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমির তরমুজ এরি মধ্যে কর্তন হয়েছে। যা এখন বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘এবার ফলন ভালো হলেও তরমুজের দাম তুলনামূলক বেশি। বিগত বছরগুলোতে বরিশালে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি হলেও এবার খুচরা বাজারে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি তরমুজের মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। এতে করে ছোট সাইজের তরমুজের মূল্যও সর্বনিম্ন একশত টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
কৃষি বিভাগের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, করোনা মহামারির মধ্যে গত মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় মোট ২৪ হাজার ৬৮৮ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। যা বর্তমান মৌসুমের থেকে ২০৭ হেক্টর জমির পরিমাণ বেশি। ওই বছর ফলন হয়েছিল ১২ লাখ ২৫ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন। এবার জমির পরিমাণ কমলেও ফলন দ্বিগুনের কাছাকাছি যাবে বলে মনে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
পটুয়াখালীর চালিতাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা তরমুজ চাষি আমির হোসেন বলেন, ‘গত বছর করোনা মহামারির কারণে তরমুজ চাষ করতে পারিনি। ওইসময় বছরের বেশিরভগ সময়টাই কেটেছে লকডাউনের মধ্যে। আবার কৃষি পণ্যও পাওয়া যায়নি। এ কারণে গত বছর তরমুজের আবাদ কম হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ মৌসুমে গত মৌসুমের থেকে কম পরিমাণ জমিতে তরমুজ আবাদ করেছি। কিন্তু আশা করছি ফল বিগত দুই তিন বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে। এর বার কারণ আবহাওয়া অনুকূলে থাকা। ফলোনের পরে এখন পর্যন্ত বান্য বা বৃষ্টি হয়নি। তাই ক্ষেতের তরমুজের এখনো কোন ক্ষতি হয়নি। এমন আবহাওয়া চলতি মাস পর্যন্ত থাকলে কৃষকের জন্য আর্শিবাদ হবে বলে জানান ওই কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের অতিরক্ত পরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘এ বছর তরমুজ আবাদে বরিশাল অঞ্চল প্রথম অবস্থানে রয়েছে। কেননা এ বছর সারাদেশে যে পরিমাণ তরমুজের ফলন হয়েছে তার ৬০ শতাংশই এই অঞ্চলে হয়েছে। ফলে চাষিরা দামও ভালো পাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মানুষ কম টাকায় ভালো জাতের এবং মানের তরমুজ খেতে পারবে বলে আশাবাদী এই কৃষি কর্মকর্তা।
সান নিউজ/কেটি