নিজস্ব প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়ান-সাটিয়াচড়া প্রতিরোধ যুদ্ধ দিবস আজ (৩ এপ্রিল)। এই যুদ্ধ ঢাকার বাইরে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ হিসেবে খ্যাাত। ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল এই প্রতিরোধ যুদ্ধে ৩১ জন ইপিআরসহ ১০৭ জন নিরীহ বাঙালি শহীদ হন।
অবশ্য প্রথম এই প্রতিরোধ যুদ্ধে তিন শতাধিক পাকসেনা হতাহত হয় বলে মুক্তিযোদ্ধারা জানান।
মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশল অফিস জানায়, টাঙ্গাইলের সংগ্রাম পরিষদ এবং হাইকমান্ডের নেতৃবৃন্দ পাকবাহিনীকে টাঙ্গাইল আসার পথে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেন। স্থান হিসেবে বেছে নেন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন মির্জাপুরের গোড়ান-সাটিয়াচড়া নামক গ্রাম দু’টি। এরইমধ্যে ১৯৭১ সালের ২ এপ্রিল সংগ্রাম পরিষদ খবর পান, ৩ এপ্রিল পাকবাহিনী টাঙ্গাইল প্রবেশ করবে।
হাইকমান্ড এবং সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ও বর্তমান টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুকের নেতৃত্বে ৩১ জন ইপিআর গোড়ান-সাটিয়াচড়া এসে পরিখা খননের কাজ শুরু করেন। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে এলাকার কিছুসংখ্যক লোক এতে বাধা দেন।
অবশ্য সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সহায়তায় সে বাধা দূর করা হয়। পরে পরিখা খনন করে সেখানে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধের জন্য অবস্থান নেন তারা।
অপরদিকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গোড়ান-সাটিয়াচড়া থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে দেলদুয়ারের নাটিয়াপাড়া নামকস্থানে প্রতিরোধ দেয়াল তৈরি করে অবস্থান নেন মুক্তিযোদ্ধারা।
এলাকাবাসী জানান, ৩ এপ্রিল কাকডাকা ভোরে পাকবাহিনীর বিরাট একটি কনভয় টাঙ্গাইলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এই কনভয়টি গোড়ান-সাটিয়াচড়ায় পৌঁছালে মুক্তিযোদ্ধারা সঙ্গে সঙ্গে উভয়দিক থেকে হামলা করে।
পরে হেলিকপ্টার থেকে মেশিনগান দিয়ে ফায়ার করে মুক্তিযোদ্ধাদের বাঙ্কারগুলো ধ্বংস করতে সক্ষম হয় পাকবাহিনী। পরে পাকবাহিনী গোড়ান ও সাটিয়াচড়া গ্রামে ঢুকে নারী-পুরুষসহ অসংখ্য মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। আগুন দিয়ে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।
এদিকে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর ঢাকার বাইরে প্রথম এই প্রতিরোধ যুদ্ধের স্থানে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের স্মৃতি সংরক্ষণ প্রকল্পের অধীন ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৩৩ লাখ ২১ হাজার ৪০০ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সৌধটি নির্মাণ করে।
এদিকে করোনা মহামারির কারণে প্রতিরোধ যুদ্ধ দিবসে এই স্মৃতিসৌধে শুধু পুস্পস্তবক অর্পণের কর্মসূচি পালন করা হবে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক দুর্লভ বিশ্বাস বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের এই গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধের শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সান নিউজ/এসএম