নিজস্ব প্রতিনিধি, খুলনা: খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল কাশেম হত্যা মামলার রায়ে ১ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনার জননিরাপত্তা বিঘ্নিত অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো শেখ আবুল কাশেম হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন- মোহাম্মদ তারেক। এসময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিল না। দীর্ঘ ২৬ বছর পর আলোচিত চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
বাকি ৬ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলা থেকে তাদেরকে খালাস দেয়া হয়। এরা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর বিশ্বাস, তরিকুল হুদা টপি, ওসিকুর রহমান, মুশফিকুর রহমান, মফিজুর রহমান, আনিসুর রহমান মিলটন। এর মধ্যে আব্দুল গফফার বিশ্বাস ছাড়া অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছে।
রায়ের বিষয় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এড. আরিফ মাহমুদ লিটন বলেন, দীর্ঘ ২৬ বছর পর আদালত এই মামলার রায় দিয়েছে। মামলায় আসামি ছিল ৭ জন। এ মামলার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামির ১৬৪ দ্বারা জবানবন্দির আলোকে বিচারক এই রায় দিয়েছে। এ মামলার তদন্তকারী অফিসারের গাফিলতিতে সঠিক তদন্ত না হওয়ার কারণে সঠিকভাবে বিচার হয়নি। সুষ্ঠুভাবে তদন্ত না হওয়ার কারণে কিছু আসামিদের নাম বাদ যায় এবং অন্য আসামিরা খালাস পেয়ে যায়।
শেখ আবুল কাশেম এর ভাইপো শেখ মনিরুজ্জামান এলু বলেন, এ রায়ে আমরা হতাশ। আমরা ন্যায় বিচার পাই নাই। আসামিদের খালাস দেয়া হয়েছে। তাছাড়া হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী অর্থ জোগানদাতাদেরও এ মামলা থেকে বাদ দিয়ে মামলার রায় দিয়েছে। এটা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না। পরিবারের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবো উচ্চ আদালতে যাবো কি না।
এদিকে, খালাস পাওয়া সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর বিশ্বাস বলেন, আমি সঠিক বিচার পেয়েছি। বিচারক সঠিক রায় দিয়েছেন। আমি এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলাম না। আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছিলো।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের ২৫ এপ্রিল পৌনে ২টার দিকে নগরীর স্যার ইকবাল রোডস্থ পিকচার প্যালেস মোড় বেসিক ব্যাংকের সামনে আবুল কাশেম ও তার গাড়ি চালক মিকাইল হোসেনকে ৫ থেকে ৬ জন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী গুলি করে হত্যা করে। অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে খুলনা সদর থানায় মামলা করেন নিহতের ভগ্নিপতি শেখ আলমগীর হোসেন। মামলাটি প্রথমে খুলনা থানায় দায়ের করা হলেও পরে এটি সিআইডি তদন্ত করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এ মামলায় ১০ জনকে আসামি করে ১৯৯৬ সালের ৫ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার বিচার কার্য চলাকালে দু’জন আসামি সৈয়দ মনিরুল ইসলাম ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ২৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক ডেপুটি মেয়র ইকতিয়ার উদ্দিন বাবলু মারা যান। তিনিও সন্ত্রাসীর গুলিতে বানরগাতি এলাকায় নিহত হন। খুলনা চেম্বার অফ কমার্স এর বর্তমান সভাপতি কাজী আমিনুল হকেকে আসামী করা হলে ১৯৯৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মামলা থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়।
শেখ আবুল কাশেম ছিলেন ইকবাল নগর ইউনিয়নের একাধিকবার নির্বাচিত কমিশনার ছিলেন। তিনি খুলনার চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম পরিষদের প্যানেল মেয়রও ছিলেন। এছাড়া তিনি খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। তিনি খুলনার নিরালা এলাকার আলোচিত হাজী বাড়ির ছোট সন্তান। এই হাজীবাড়ি ও আবুল কাশেম কে কেন্দ্র করে নব্বইয়ের দশকে আবর্তিত হয়েছে খুলনা রাজনীতি এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাস ক্লাবভিত্তিক রাজনীতি ব্যবসায়িক রাজনৈতিক ও সামাজিক সর্ব সিদ্ধান্ত।
সান নিউজ/কেএ/কেটি