চট্টগ্রাম ব্যূরো : চট্টগ্রামে হেফাজতের ডাকা হতালের তেমন প্রভাব পড়েনি। দোকানপাট যেমন খোলা তেমনি যানবাহন চলাচলও করছে সড়কে। তবে অচল রয়েছে শুধু হাটহাজারী উপজেলা।
মাদ্রাসার সামনে যেখানে ইটের দেয়াল দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে সেখানে আগের মতো এখনো অবস্থান করছে ছাত্ররা। জ্বালাচ্ছে টায়ার। ফলে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
গত তিন ধরে এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। এতে হরতালের বাড়তি কোন উত্তাপ নেই বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের মতে, ২৬ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা আগমণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে হেফাজতের চারকর্মী গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
এরপর থেকে সড়কে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা। এতে চট্টগ্রাম থেকে ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যা অব্যাহত রয়েছে এখনো। নিহত ও আহতের ঘটনায় হেফাজত ইসলাম ২৮ মার্চ রোববার সকাল থেকে হরতালের ডাক দেয়।
ব্যারিকেড সৃষ্টিকারীদের দাবি, নিহতদের মরদেহ হাটহাজারী মাদ্রাসায় ফেরত চাই। তাদের দাফন কাজে যেন কোন রকম ব্যাঘাত না ঘটে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার নিশ্চয়তা চাই। সেই সাথে গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ পাঁচ দফা দাবি তুলেন তারা।
এ নিয়ে হাটহাজারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যরিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের মধ্যস্ততায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কয়েকদফা বৈঠক হয়। কিন্তু তাতে নিহতদের মরদেহ হাটহাজারীতে ফেরত দিতে রাজী না হওয়ায় কোন রকম সমঝোতা হয়নি। ফলে মাদ্রাসার ছাত্ররাও রাস্তা ছাড়েনি।
শনিবার বিকেল পর্যন্ত তারা হাটহাজারী মাদ্রাসার দক্ষিণে ত্রিবেণী মিষ্টির দোকান এলাকায় চট্টগ্রাম-নাজিরহাট সড়কে বাঁশ ও টিন দিয়ে যেখানে ব্যারিকেড সৃষ্টি করেছিল সেখানেই ছিল। এরমধ্যে সন্ধ্যায় বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, নিহতদের লাশ হাটহাজারীতে নেয়া হবে না। চমেক হাসপাতালের মর্গ থেকে সরাসরি নিহতদের বাড়িতে নিয়ে পুলিশ প্রহরায় লাশ দাফন করা হবে।
বৈঠকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ও চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক উপস্থিত ছিলেন। প্রস্তাবে দু‘পক্ষ রাজীও হয়। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে সড়কের ব্যারিকেড সরিয়ে মাদ্রাসা ছাত্রদের ফিরিয়ে নিতে বলা হয়।
বৈঠকের পর হাটহাজারী মাদ্রাসায় নিহতদের গায়েবানা জানাজাও অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা থেকে মাইকে বারবার বলা হয়, হুজুরদের নির্দেশ-তোমরা মাদ্রাসায় চলে আসো, রাস্তা ছেড়ে দাও। কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু নির্দেশনা মানছে না ছাত্ররা। তবে রাতের দিকে মাদ্রাসা ছাত্ররা ত্রিবেণী মিষ্টির দোকানের সামনে থেকে সরে এসে মাদ্রাসার সামনে ইটের দেয়াল তুলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে।
ফলে রোববার হরতালের মধ্যেও হাটহাজারীতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগের মতো বিপুল সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। এতে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সেখানকার মানুষ।
এদিকে হরতালের সমর্থনে হেফাজতের নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী, পাহাড়তলী, বাকলিয়া ও অক্সিজেন এলাকায় মিছিল বের করলেও পুলিশের ধাওয়ায় গা-ঢাকা দেয়। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচলে তেমন কোন সমস্যা হয়নি বলে জানান সিএমপির উপ-কমিশনার পিওএম (বন্দর ও উত্তর) জসিম উদ্দীন। নগরীর অলি-গলি থেকে হাটবাজার পর্যন্ত সবখানে সবধরণের দোকানপাটও খোলা ছিল বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমণের প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররমে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের নেতাকর্মী ও মুসল্লিদের একাংশ এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঘটনার সময় ছাত্ররা হাটহাজারী থানা, ভূমি অফিস, ডাকবাংলোতে হামলা চালায়। ভূমি অফিসের ফাইলপত্র ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর গাড়িতে আগুন দেয়। এরপর পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয় অর্ধশতাধিক বিক্ষোভকারী। এরমধ্যে চার জন নিহত হয়।
নিহতরা হলেন-হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র রবিউল হোসেন, তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জে, নওগাঁর বদলগঞ্জ এলাকার নসরুল্লাহ, মাদারীপুরের কাজী সিরাজুল ইসলাম ও চট্টগ্রামের রাউজানের ওয়াহিদুল ইসলাম।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, ঘটনার সময় সহকারী পুলিশ সুপার ফারাবিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে আটক করে মাদ্রাসার ছাত্ররা। এরমধ্যে বিকেল ৫টার দিকে কর্মকর্তাদের ছাড়িয়ে আনেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশ কনস্টেবল সোলেমানকে ফিরিয়ে আনা হয় শনিবার বিকেলে।
সান নিউজ/ আইকে