ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম ব্যুরো : মুক্ত বিনোদনের উম্মুক্ত স্থান চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। এতে প্রবেশে কোন বাঁধা ছিল না। তবে এখন আর সেটি হচ্ছে না। এই সৈকতে এখন টাকার বেড়াজাল তৈরি করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। যেখানে প্রবেশ করতে এখন গুণতে হবে টাকা।
এ তথ্য জানিয়েছেন সিডিএ‘র চিফ ইঞ্জিনিয়ার হাসান বিন শামস। আর এই কমিটির সদস্য সচিব তিনি নিজে। আহ্বায়ক হচ্ছেন সিডিএর বোর্ড সদস্য স্থপতি আশিক ইমরান। কমিটিতে রয়েছে আরও দুই সদস্য। চার সদস্যের এই কমিটি পতেঙ্গা সৈকতের উপর ইতোমধ্যে একটি রিপোর্টও উপস্থাপন করেছেন।
রিপোর্টের ভিত্তিতে সিডিএর বোর্ড কমিটি সৈকতকে দুটি জোনে বিভক্ত করে অপারেটর নিয়োগের বিষয়ে একমত হওয়ার পর মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই অপারেটর নিয়োগের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে বলে জানান কমিটির সদস্যরা।
রিপোর্টে বলা হয়, উম্মুক্ত পতেঙ্গা সমূদ্র সৈকতের একটি নির্দিষ্ট অংশ বেসরকারি অপারেটর কো¤পানির হাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এই অংশে টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হবে পর্যটকদের। তবে বাকি অংশ আগের মতো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। পতেঙ্গা সমূদ্র সৈকতের সেবার মান বাড়াতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সিডিএ‘র তথ্যমতে, ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সৈকত এবং আউটার রিং রোডের গার্ডেনিং, লাইটিং, গাছ লাগানোসহ রক্ষণাবেক্ষণ কাজ পরিচালনা করবে ২টি অপারেটর কো¤পানি। এরা নিজেদের মতো করে পর্যটকদের কাছ থেকে টিকিট বিক্রি করে সুযোগ সুবিধা দেবেন।
একজন পর্যটক টিকিট কেটে বাড়তি সুবিধা পেলেও টিকিট কাটা ছাড়াও সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আর অপারেটরদের আয়ের একটি অংশ সিডিএকে দেবেন। সিডিএর পক্ষ থেকে একটি টিম অপারেটরদের কাজ তদারকি করবেন।
তবে এ কাজে সৈকতে আসা পর্যটকরা ভোগান্তির শিকার হবেন। সেই সাথে উম্মুক্ত এই সৈকত মুক্ত বিনোদনের সুযোগ আর হবে না বলে মনে করছেন প্রকৃতিপ্রেমি পর্যটকরা।
শনিবার দুপুরে সমূদ্র সৈকতে আসা মিজানুর রহমান নামে এক পর্যটক বলেন, সৈকতর যে তিন কিলোমিটার একটু পরিচ্ছন্ন, আলোকিত সেটাই দখলে নিয়ে টাকার বেড়াজাল বানাবে সিডিএ। যে তিন কিলোমিটার উম্মুক্ত থাকবে তাতে কোন অবকাঠামো নেই। নেই আলোক বাতিও। সেখানে চোর-ছিনতাইকারীর অবস্থান রয়েছে। ফলে ওখানে পর্যটকরা কেন এবং কিভাবে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএ‘র চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, নতুন এই উদ্যোগের কারণে সাধারণ মানুষ কোনভাবেই ভোগান্তিতে পড়বে না। বরং তারা আগের চেয়ে ভালোভাবে সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করবেন। মূলত তাদের জন্য সেবা বাড়াতেই এই অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশেই এমন সিস্টেম চালু আছে। যেখানে অপারেটররা সুযোগ সুবিধা দিয়ে নিজেদের মতো করে সৈকত পরিচালনা করেন।
সুতরাং পতেঙ্গা সৈকতকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র করতে সিডিএ পরিকল্পনা নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে সৈকতের আলো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অপারেটর নেয়া হয়েছে। তবে এই ব্যাপারে সিডিএ বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, নগরীর পতেঙ্গায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৈরী বেড়িবাঁধ ঘিরে সমূদ্র সৈকতের ৬ কিলোমিটার এলাকায় আউটার রিং রোড ও আলোকসজ্জ্বার কাজ কওে সিডিএ। বিপুল অর্থ ব্যয়ে গড়ে তোলা এই অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে ক্রমশ। বিদ্যুৎ বিলের যোগান না থাকায় সৈকতে প্রায় বন্ধ থাকে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বাজেট না থাকায় ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়িতে ক্রমশ নান্দনিকতা হারাচ্ছে সৈকত এলাকা। প্রতিদিন এই সৈকতে আগমণ ঘটে এক লাখেরও বেশি পর্যটকের।
সান নিউজ/