চট্টগ্রাম ব্যূরো : পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন মাদ্রাসাছাত্র নিহত হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা সদরের পরিস্থিতি এখনো থমথমে। বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম থেকে ব্যস্ততম চার সড়কে যানবাহন চলাচল। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে হাটহাজারী এলাকা। এ ঘটনায় রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাকও দিয়েছে হেফাজত।
২৭ মার্চ শনিবার সকালে এমন তথ্য জানিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। তিনি বলেন, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। হাটহাজারী থানার সামনে বিজিবির সাঁজোয়া যান রাখা হয়েছে।
তিনি জানান, শুক্রবার জুমার নামাজের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমণ বিরোধী বিক্ষোভে গুলিবিদ্ধ হয়ে চার মাদ্রাসা ছাত্র নিহতের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে হাটহাজারী থানার উত্তরে ত্রিবেণী মিষ্টির দোকান মোড়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বিপুল সংখ্যক মাদ্রাসাছাত্র অবস্থান করছে। এ কারণে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়ক হয়ে ফটিকছড়ি-নাজিরহাট-রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর থেকে রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এরপর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী হরতাল ঘোষণা করেন।
তবে উত্তেজনা প্রশমনে শুক্রবার রাতে হাটহাজারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের মধ্যস্ততায় হেফাজত নেতা এবং পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মধ্যে বৈঠক হয়। এরপরও বিরাজমান সমস্যার সমাধান হয়নি বলে জানান ইউএনও রুহুল আমিন।
তিনি আরও জানান, শনিবার সকাল ৯টা থেকে হাটহাজারী থানায় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থানায় অবস্থান করছেন।
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মুঠোফোনে জানান, শুক্রবার রাতে দু‘পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তারা ৫টি দাবি দিয়েছে। এরমধ্যে নিহত চারজনের ময়নাতদন্ত সঠিকভাবে করতে হবে। তাদের দাফন কাফনেও যেন কোন অসুবিধা না হয়। আহতদের সু চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং গুলি করার ঘটনায় দায়ী পুলিশের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার সকাল থেকে হাটহাজারী বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। থানা ভবনের দক্ষিণে বাস স্টান্ডে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে সেখানে অবস্থান করছে বিপুল সংখ্যক র্যাব ও পুলিশ। থানার আশপাশে অবস্থান নিয়েছে বিজিবি।
হাটহাজারী মাদ্রাসার দক্ষিণে ত্রিবেণী মিষ্টির দোকান এলাকায় চট্টগ্রাম-নাজিরহাট সড়কে বাঁশ ও টিনের ব্যারিকেড দিয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা অবস্থান করছে। কিছুক্ষণ পরপর মাদ্রাসার ছাত্ররা গো ব্যাক মোদি, গো ব্যাক মোদি বলে স্লোগান দিচ্ছে।
এর আগে ঢাকার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের নেতাকর্মী ও মুসল্লিদের একাংশ এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল বের করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
বেলা আড়াইটা থেকে বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-নাজিরহাট সড়কে যান চলাচল। ঘটনার সময় ছাত্ররা হাটহাজারী থানা, ভূমি অফিস, ডাকবাংলোতে হামলা করে। ভূমি অফিসের ফাইলপত্র ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটে। এরপর পুলিশ গুলি ছোড়ে। এভাবে দু‘পক্ষের মধ্যে প্রায় আধাঘণ্টা সংঘর্ষ চলে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে চার মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হয়। আহত হয় আরো অর্ধশতাধিক।
ঘটনার সময় হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফারবিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে মাদ্রাসার ছাত্ররা আটক করে। তবে বিকেল ৫টার দিকে তাদের ছাড়িয়ে আনেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সান নিউজ/আইকে