চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে বিগত সময়ের তুলনায় দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৮৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২০৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘন্টায় শনাক্ত হয়েছে ২৬৯ জন। এর আগের ২৪ ঘন্টায় শনাক্ত হয়েছে ২৭২ জন।
যা একদিনের করোনা শনাক্তের হারে সর্বোচ্চ। এমন তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি। ২৫ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে এ তথ্য জানান তিনি। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানার পাশাপাশি, করোনার নতুন জাতের রুপান্তর ঘটায় সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার মুল কারণ হতে পারে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে করোনার সবচেয়ে বেশি বৈচিত্রময় জিনোম সিকুয়েন্স পাওয়া গেছে। জিনোমগুলোর সঙ্গে সৌদি আরব তথা মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলের ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্সের মিল রয়েছে। চট্টগ্রামে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ অঞ্চলের ২০২০ সালের সদৃশ জিনোম সিকুয়েন্সের ভাইরাস।
গবেষকদের আশঙ্কা, পরিবর্তিত ধরনের কারণেও করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এই ভেরিয়েন্টে সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। এতে সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি প্রাণহানি বাড়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, করোনার এই টেউ এবার মারাত্নক হবে।
শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, গত বছর এই সময় থেকে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর চট্টগ্রামে এ যাবত একদিনে এত সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি কখনো। গত তিন দিন শনাক্ত হওয়া করোনার নমুনা সর্বোচ্চ। করোনা সংক্রমণ শনাক্তের এই হার গড়ে ১২.২১। অথচ সারাদেশে এখনো ১০ শতাংশের নিচে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ছয়টি ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ১ হাজার ৮৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২০৮ জন। যার হার ১১.১১ শতাংশ। এর আগের ২৪ ঘন্টায় ২ হাজার ৩৯৭ নমুনা পরীক্ষায় ২৬৯ জন। যার হার ১২.২১ শতাংশ। এর আগের ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৯৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৭২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যার হার ১৩.৮২ শতাংশ।
গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১ হাজার ৮৫৯ জন। আর চলতি মাসের ২২ দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৪ জন। এছাড়া এ মাসেই করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। সংখ্যা ও হার দুই ক্ষেত্রেই এ সময়ের মধ্যে একদিনের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। করোনা পরীক্ষা আরও বাড়লে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, করোনা সংক্রমণে নতুন ধরনের উপসর্গ পরিলক্ষিত হচ্ছে। জ্বর ছাড়া চোখের প্রদাহ, শরীর ব্যথা, চামড়া লাল হয়ে যাওয়া, হাত ও পায়ের আঙুল সাদা হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মানুষের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ফলে চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছে। আইসিইউ খোঁজ চেয়ে অনেকেই হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে দৌড়াচ্ছে। তবে করোনা থেকে বাঁচার উপায় হলো মাস্ক পড়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। জনসমাগম হয় এমন স্থানে ভিড় না করা। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।
এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে মাঠে তৎপর রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গত ১৪ মার্চ থেকে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের টিম মাঠে নামে। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় জরিমানাও করা হচ্ছে। এছাড়া সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিতকরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ২২ মার্চের নির্দেশনায় ২৩ মার্চ থেকে গণপরিবহনে তদারকিতে নগরীর তিনটি প্রবেশপথে চেকপোস্ট স্থাপন করেছে জেলা প্রশাসন। এরপরও অনেকেই এসব নির্দেশনা মানছে না। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের মত, নজরদারির পাশাপাশি প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে জেল-জরিমানাও করতে হবে।
সান নিউজ/ আইকে