নিজস্ব প্রতিনিধি, নোয়াখালী: ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এই হুমকি দেন। কাদের মির্জা প্রায় ৩০ মিনিট লাইভে বক্তব্য দেন।
এসময় কাদের মির্জা উল্লেখ করেন, আমি বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়েছি, গত সংসদ নির্বাচনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে যেভাবে রাতের অন্ধকারে তার বাসা থেকে সিএমএইচে নিয়ে গেছে, অনুরূপ কিছু করার জন্য আজ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব, ওনার স্ত্রীর প্ররোচনায়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি দেশবাসীকে জানিয়ে দিচ্ছি, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমি সঙ্গে সঙ্গে আত্মহত্যা করব। আমার ওপর যদি কিছু ঘটাতে আসেন, আমি বলে দিচ্ছি আমি আত্মহত্যা করব। আমি কোনো অসত্যের কাছে মাথা নত করব না।’
কাদের মির্জা প্রশ্ন রাখেন, ‘কী করবেন? মেরে ফেলবেন? জেলে দেবেন? লাঞ্ছিত করবেন? আর কী বাকি আছে? দুই হাজার গুলি একতরফা আমার পৌরসভায় করেছেন। ওবায়দুল কাদের সাহেব, আপনার লেলিয়ে দেয়া ফেনীর নিজাম হাজারী (সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী), নোয়াখালীর একরাম চৌধুরী (সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী), বাদইল্লার (কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) নেতৃত্বে এখানকার সব জাসদ, দুই হাজার গুলি আমার পৌরসভায় করেছে।’
সেতুমন্ত্রীর ভাই আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘সব শিয়ালের এক ডাক। ঢাকা থেকে আরম্ভ করে আমার এলাকা পর্যন্ত। আজ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে অনেকভাবে। আজ আল্লাহ, দলের কিছু ত্যাগী নেতা–কর্মী এবং সাধারণ মানুষ ছাড়া কেউ আমার সঙ্গে নেই। আমার সত্যবচনের পর আস্তে আস্তে অনেকেই আমার কাছ থেকে সরে গেছেন। এ জন্য আমি আতঙ্কিত নই, আমি আরও উজ্জীবিত হচ্ছি। যারা অস্ত্রবাজির সঙ্গে জড়িত, টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত, যারা গরিব ভূমিহীনের জমি দখল করেছেন, তারা আজ কেউ আমার সঙ্গে নেই।’
কাদের মির্জা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের শোকসভা বন্ধ করে দেয়ার প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখানকার নেতা, যিনি ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করেছেন, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, সেই মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুর পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করায় মনে হয়, আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবে। কাজটি প্রশাসনের মাধ্যমে কে বা কারা করেছেন, সেটা আপনারা খবর নেন। এই সংস্কৃতি যদি বাংলাদেশে চলতে থাকে, তাহলে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এই জন্য দিয়েছেন? আমার প্রশ্ন। অপরাজনীতি, দুর্নীতি, ভোট চুরি এগুলোর জন্য কি বঙ্গবন্ধু এই স্বাধীনতা এনেছেন? কথা বলতে হবে সবাইকে। শুরু হয়েছে, তরুণদের মধ্যে আজ চেতনার সৃষ্টি হচ্ছে।’
বসুরহাট পৌরসভার আলোচিত মেয়র কাদের মির্জা বলেন, ‘দুর্ভাগ্য হয়তো, আমাকে কেউ পছন্দ করছেন না, আমি সত্য কথা বলাতে। এটাই হচ্ছে আসল কথা। কী করবেন, করেন। যা করার করবেন, দেরি করছেন কেন? পুলিশ দিয়ে আমার ছেলেদের বাড়িতে বাড়িতে অত্যাচার, অস্ত্র ঢুকিয়ে দিয়ে মামলা দিচ্ছেন। ওবায়দুল কাদের এবং তার স্ত্রী বলে দিয়েছেন প্রশাসনকে, যে তার (কাদের মির্জা) সঙ্গে যাতে চতুর্দিকে একটা লোকও না থাকে, সে ব্যবস্থা করো।’ কাদের মির্জা বলেন, ‘এটা কী দেশ? কী আইন? কোথায় গিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা? আজ কি বাংলাদেশে মানবাধিকার সংস্থা নেই? বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা আজ কোথায়? এটা আমি প্রশ্ন করতে চাই।’
লাইভে কাদের মির্জা আরও বলেন, ‘আলাউদ্দিন হত্যা এখানে (পৌরসভা কার্যালয় এলাকায়) হয়েছে। আমাদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। আমি আল্লাহকে সাক্ষী করে বলতে পারি, আমি যদি কারও হাতে অস্ত্র দিয়ে থাকি, আল্লাহ আমাকে এখনই মৃত্যু দিন। আমার এখান থেকে কোনো গোলাগুলি হয়নি। পুলিশ এবং তাঁরা (মিজানুর রহমানের অনুসারী) সংঘর্ষ করে এই ছেলেকে মেরেছে। এটা সিএনজি ড্রাইভার। এটা পরিকল্পিত।’
কাদের মির্জা বলেন, ‘আজ বিচার করার কেউ নেই। সবাইকে আমি চিনি। যারা অপরাজনীতির হোতা, তারা আজ সব পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কোনো সৎ নেতা, কোনো ত্যাগী নেতা আজ আওয়ামী লীগে নগণ্য জায়গায় থাকতে পারে, অধিকাংশ জায়গায় অপরাজনীতির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তারা নেতৃত্বে আছেন।’
সান নিউজ/আরআই