এম.কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি : রাঙামাটি জেলা লংগদু সদর উপজেলা থেকে প্রায় ১৫-১৮ কিলোমিটার প্রত্যন্ত দুর্গম করল্যাছড়ি ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ড এর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার জনসাধারণের বসবাস। সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে পাহাড়ি বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠী বাস করছে এই ইউনিয়নে। লংগদুতে রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কালভার্র্টের বেহালদশা।
স্থানীয়রা বলছে উপজেলার করল্যাছড়ি ইউনিয়নে রাস্তা ঘাট ও ব্রিজ কালভার্টগুলো সে মান্ধাতা আমলের রয়ে গেছে। ১৯৯৩-৯৪ সালে করল্যাছড়ি ইউনিয়নে ৪-৫টি সরু ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। ওই সব ব্রিজ কালভার্ট চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই সব ব্রিজগুলো যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচল করছে করল্যাছড়ি ইউনিয়নবাসী। অপর দিকে ভাঙ্গাচুড়া ব্রিফ সলিং ও কাঁচা রাস্তা ঘাট দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা। ব্রিজ ও রাস্তাঘাট যথাযথ না হওয়ায় করল্যাছড়ি ইউনিয়নবাসীর যানবাহন চলাচলের একমাত্র উপায় মোটরসাইকেল। করল্যাছড়িবাসীর যাত্রীসেবা দেয়া হয় একমাত্র মোটরসাইকেল যোগে। মোটরসাইকেল দিয়ে তারা লংগদু সদর ও মাইনীমুখ বাজারে যাতায়াত করে থাকে। রাস্তাঘাট ও ব্রিজগুলো প্রসারিত হলে মাইক্রোবাস, পিকআপ, সিএনজি ও কার যাতায়াত করতে পারতো।
করল্যাছড়ি বাজার সেক্রেটারি মোঃ ইউসুফ বলেন, যদিও মান্দাতা আমলের রাস্তা ঘাট ও ব্রিজ দিয়ে আমাদের যাতায়াত। তারপরও সরু ব্রিজগুলোর জন্য মাঝারি ট্রাক বা পিকআপ মালামাল নিয়ে বাজারে ঢুকতে পারছে না। করল্যাছড়ি বাজার একটি জনবহুল বাজার এখানে প্রতি বুধবারে হাট বসে। হাটে প্রচুর লোকজন আসে। স্থানীয়দের আদা, হলুদ ও কাঁচা তরিতরকারি বহন করতে অনেক কষ্ট হয়। যদি রাস্তাঘাট ও ব্রিজগুলো ভাল হতো তাহলে এসব কষ্ট থেকে রেহাই পেত তারা।
তিনি আরও বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নতি হলে এখানকার ব্যবসায়িরা সরাসরি চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি থেকে পরিবহন যোগে মালামাল নিয়ে আসতে পারতো। যে কোন এলাকার উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। করল্যাছড়ি বাজার ব্যবসায়িদের দাবি অবহেলিত এই এলাকার প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
করল্যাছড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা বলেন, করল্যাছড়ি ইউনিয়ন আয়তনে অনেক বড় এবং লোকসংখ্যা পাহাড়ি বাঙালি মিলে প্রায় ১৫ হাজার। এলাকার মানুষ বেশীর ভাগই কৃষির উপর নির্ভরশীল। সমতলের ন্যায় বিস্তৃত্ব এই এলাকাটি। যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়ে তেমন উন্নত হয়নি করল্যাছড়ি ইউনিয়ন। তবে প্রচুর সম্ভাবনাময় উন্নয়ন উন্নতি করার মত অনেক কিছু রয়েছে। প্রয়োজন উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই ইউনিয়নে মান্ধাতা আমলের চিকন চিকন ৪-৫টি সরু ব্রিজ রয়েছে, যা চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও লংগদু সদর উপজেলার সাথে করল্যাছড়ির সাথে যোগাযোগের রাস্তা ঘাট তেমন নেই বললেই চলে।
লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাইনুল আবেদীন বলেন, লংগদু সদর উপজেলা হতে করল্যাছড়ি বাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের রাস্তা। তার মধ্যে লংগদু দীঘিনালা সড়ক দিয়েও করল্যাছড়ি বাজারে যাওয়া যায়। তবে ভিতরের রাস্তাটুকু ব্রিক সলিং। ইসলামাবাদ ভিতর দিয়েও একটি ব্রিক সলিং রাস্তা রয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে করল্যাছড়ি বাজার এবং ওই এলাকায় বেশ পুরাতন ৩-৪টি সরু ব্রিজ রয়েছে। ওই ব্রিজগুলো জেলা পরিষদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক তৈরি করা হয়েছিল। যা বর্তমানে ওই সব ব্রিজ যানবাহন চলাচলে কোন কাজে আসবে না। এসব ব্রিজ নতুন করে নির্মাণ করতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা পরিষদকে সহায়তার হাত বাড়াতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ব্রিজগুলো তৈরী হয়ে গেলে ওই এলাকার চেহারা পাল্টে যাবে। আর ব্রিক সলিং ইটের রাস্তার ব্যাপারেও নতুন প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
সান নিউজ/কেইউ/এনকে