নিজস্ব প্রতিনিধি, নরসিংদী : নরসিংদীতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন অনেকে। করোনাকে হালকাভাবে দেখা, মানুষের অসচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেয়ায় মানুষের অবাধ চলাফেরায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত।
এছাড়া করোনা থেকে রক্ষা করতে পুলিশ বিভাগের মাস্ক বিতরণ, জেলা প্রশাসনের কিছু ভ্রাম্যমান আদালত ছাড়া তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেখা যাচ্ছে না বলে মত প্রকাশ করেন সচেতন মহল। এছাড়া করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের তৎপরতা নাই বলে মন্তব্য করেন সচেতন মহল। এ বিষয়ে তাদের আরো দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
করোনার টিকা গ্রহণের পরও ১৬ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন পলাশ থানা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক শামসুল আলম। এছাড়া গত ২১ মার্চ সন্ধ্যায় করোনা পজেটিভ হয়ে মারা গেছেন মাধবদী বাজার মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শাহজাহান মোল্লা।
এদিকে নরসিংদীর বর্তমান সিভিল সার্জন ডা: মো: নূরুল ইসলামও করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। করোনা পরীক্ষা ছাড়াও অনেকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়বেন ভেবে অনেকেই পরীক্ষাও করছেন না।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা: একরামুল হক শামীম বলেন, মানুষের মাঝে সচেতনতা কমে গেছে, এছাড়া টিকা গ্রহণের পরবর্তী সাবধানতা অবলম্বন করছেন না। বিনোদন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, হাট-বাজারে অবাধে লোক সমাগমে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেন। আর বর্তমান সময়ে করোনা প্রতিরোধে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে, তাহলে করোনা প্রতিরোধ কিছুটা হলেও সম্ভব হবে।
নরসিংদী সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম মোস্তাফা মিয়া বলেন, মানুষ দীর্ঘ সময়ের একটি লকডাউনে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে এখন তারা আর স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না, অনেকটা হেলাফেলা করে অসাবধানতা অবস্থায় চলছেন যার ফলে করোনা পজেটিভ রোগী বেড়ে যাচ্ছে।
নরসিংদীতে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯ জন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ৯৮৪ জনে। রোববার (২১ মার্চ) বিকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নরসিংদীর সিভিল সার্জন কার্যালয়।
সিভিল সার্জন সূত্র থেকে যাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় জেলার ৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় রোববার হাতে পাওয়া এসব ফলাফলে ৩৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া জেলা হাসপাতালে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ২ জন করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে সদর উপজেলার ৩৮ জন ও শিবপুরে ১ জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত জেলার ছয়টি উপজেলা থেকে মোট ১৯ হাজার ৯২৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৮৩৬ জন, শিবপুরে ২৮৯ জন, পলাশে ৩২৫ জন, মনোহরদীতে ১৮৮ জন, বেলাবতে ১৬০ জন ও রায়পুরায় ১৮৫ জন।
এ পর্যন্ত জেলায় কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ৫৩ জন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২৯ জন, পলাশে ৩, বেলাবতে ৬, রায়পুরায় ৬, মনোহরদীতে ২ ও শিবপুরে ৭ জন।
এখন পর্যন্ত মোট আইসোলেশনমুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৪৩জন। বর্তমানে হাসপাতালে আইসোলেশনে রয়েছেন ৮ জন এবং হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১৬৩জন। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা ৬৬৯জন। বিগত ২৪ ঘন্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা ১৫৬জন।
এছাড়া বিগত ২০ মার্চের ফলাফলে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪জন। ১৯ তারিখের ফলাফলে করোনা পজেটিভ হয়েছেন ১৮ জন। এছাড়া জেলা হাসপাতালে রেপিড অ্যান্টিজেন্ট পরীক্ষায় ১জন এবং রায়পুরায় জিন এক্সপার্ট পরীক্ষায় ১জন করোনা পজেটিভ। ১৭ মার্চের ফলাফলে ৩৭জন। ১৬ মার্চের ফলাফলে ১৭ জন। ১৩ মার্চের ফলাফলে ৮জন। ১১ মার্চের ফলাফলে ১১জন। এছাড়া রায়পুরায় জিন এক্সপার্ট মেশিনে পরীক্ষায় ১জন করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে।
নরসিংদীর ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা: সৈয়দ আমীরুল ইসলাম শামীম জানান, নরসিংদীর বর্তমান সিভিল সার্জন ডা: মো: নূরুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত। বর্তমানে নরসিংদীতে কি কারণে করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, করোনার প্রতি সাধারণ মানুষের ভীতি প্রবণতা না থাকা ও অসচেতনতাসহ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অবাধ চলাফেরার কারনেই করোনা বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া বিদেশ থেকে প্রবাসীদের অবাধ যাতায়াতের ফলে করোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে কি না সে বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ গবেষণা করছেন।
এছাড়া করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ কি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তা সঠিক জানাতে না পারলেও তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ বিভাগকে নিয়ে একত্রিতভাবে জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।
সান নিউজ/এসআইআর/এনকে