নিজস্ব প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার একটি নির্দেশনায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। করোনা সংক্রমণ রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেখানে ৩০ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছেন। সেখানে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত স্কুলে অবস্থান করার, হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেয়া, স্কুলের স্ক্যাচ ম্যাপ এলাকার শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনা খোঁজ নিতে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার এধরনের সরকারি সিদ্ধান্তের বিপরীত সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
মৌলভীবাজারের কিছু শিক্ষক বলেন আমরা গত ডিসেম্বর থেকে সরকার প্রদত্ত নিদের্শনা মতো সকল দায়িত্ব পালন করে আসছি। জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের নতুন বই বিতরণ, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি,স্ক্যাচ ম্যাপ এলাকার শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশু জরিপসহ যাবতীয় কাজই করেছি। কিন্তু এখন আবারও করোনার প্রার্দূভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিন গণপরিবহণে চড়ে ২০-২৫ কিলো মিটার দূরের স্কুলে প্রতিদিন যাওয়া এবং শিক্ষার্থীদের বাড়ি যাওয়া আমাদের জন্য ও শিশু শিক্ষার্থী, তাদের পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
শিক্ষকরা বলেন, আমাদেরতো ডিপিইও স্যার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারদের মতো নিজস্ব পরিবহন নেই। আমরা প্রতিদিন গণপরিবহণে চড়ে ২০-২৫ কিলো মিটার দূরের পাশের উপজেলা রাজনগর, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে যেতে হয়। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন উপজেলা সদর থেকে ২০-২৫ কিলোমিটার দূরের স্কুলে গণপরিবহণ ব্যবহার করে প্রতিদিন স্কুলে যেতে হচ্ছে। স্কুলে যদি পাঠদানের সুযোগ থাকতো তবে আমাদের এ পরিশ্রম স্বার্থক হতো। কিন্তু কোন কাজ ছাড়াই প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আমাদের জন্য পন্ডশ্রম হচ্ছে। এতে আমাদের ও আমাদের পরিবারের করোনা ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষক নানান শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।
যেহেতু প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় শিক্ষকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সকল শিক্ষকদের করোনা ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় নেয়ার জন্য প্রতিটি শিক্ষককে ভ্যাক্সিন নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এখনো শিক্ষকদের ২০ ভাগও টিকা নিতে পারেননি। এ অবস্থায় সিলেট বিভাগের শিক্ষকদের ও তাদের পরিবারের কয়েক লাখ মানুষকে করোনার ঝুঁকিতে ফেলার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। তাই এবিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া প্রয়োজন। বিচ্ছিন্ন এধরণের নির্দেশ সরকারের নেয়া জননিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে বলে শিক্ষকরা মনে করেন।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামছুর রহমান বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সান নিউজকে বলেন, সিলেটের ডিডি সাহেবের সাথে মতবিনিময় সভার সিদ্ধান্ত মতো আমি এ জেলার প্রতিটি স্কুলের শিক্ষককে গত জানুয়ারি থেকে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার ও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেয়া, শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লেখাপড়ার খোঁজ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। শিক্ষকরা তো বাড়িতে বসে থাকতে পারেন না। এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এধরণের নির্দেশের স্মারক নং বলতে পারেননি।
অতি উৎসাহি কোন কর্মকর্তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত যাতে সরকারের জননিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে নির্দেশনা দেবেন এ প্রত্যাশা সচেতন মহলের।
সান নিউজ/এসকেডি/ এনকে