এনামুল কবীর, সিলেট : নগদ টাকার সাথে প্রায় ১০/১২ জাতের সবজির বীজ। সঙ্গে সার ও কীটনাশক। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সিলেটের ৩ হাজার ২শ’ প্রান্তিক চাষিকে দেয়া হয়েছে নগদ প্রায় ৬২ লাখ টাকা। পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটাতেই সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
সম্প্রতি অধিদফতরের সিলেট অফিসের প্রশিক্ষণ ও তথ্য অফিসার বিমল চন্দ্র সোম জানিয়েছেন এ তথ্য।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী সরকার মুজিববর্ষ পালন করেছে। বিষয়টিকে সামনে রেখে নানাখাতে কোটি কোটি টাকা বাজেটে বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে এখনো বাংলাদেশের প্রাণ হিসাবে খ্যাত কৃষিখাত এক্ষেত্রে যথারীতি অবহেলিতই থেকে গেছে। সিলেট বিভাগের চিত্রটাই সারাদেশের জন্য একটা প্রতিকী চিত্র হিসাবেই ধরা যেতে পারে। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে পারিবারিক পুষ্টি বাগান ছাড়া এখাতে আর কোন বরাদ্দ নেই। অথচ আরও নানান গৌণখাতে বরাদ্দ হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এনিয়ে তীব্র অসন্তোষও আছে কৃষকদের মধ্যে।
পারিবারিক পুষ্টি বাগান বাবদ দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের ৩২টি পরিবারকে ১ হাজার ৯শ’ ৩৫ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেসব কৃষকের বাড়িতে কমপক্ষে ১ শতক পতিত জমি আছে, এক্ষেত্রে তারা অগ্রাধিকার পেয়েছেন। উপজেলা কৃষিকর্মকর্তারা তৃণমূল পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশে এসব কৃষক নির্বাচন করে তালিকা পাঠিয়েছেন। সে অনুযায়ী অর্থসহায়তা দেয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সরকারের শর্ত ছিল, যাদের বাড়িতে কমপক্ষে ১শতক পতিত জমি রয়েছে এবং সেই জমিতে কমপক্ষে সবজি চাষের জন্য ৫টি পৃথক শেড রয়েছে বা তৈরি করতে পেরেছেন, এ সহায়তার জন্য কেবল তাদেরকেই নির্বাচন করা হয়েছে।
সিলেট জেলার ১০০টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে ৩২ জন করে মোট ৩ হাজার ২শ’ প্রান্তিক কৃষককে পুষ্টি বাগানের জন্য অর্থবরাদ্দ দেয়া হয়। এ হিসাবে সিলেট জেলায় এখাতে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। সঙ্গে সরকারি উদ্যোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ৫ থেকে ৬শ’ টাকা ব্যয়ে এ সংক্রান্ত সাইনবোর্ডও টানানো হয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি বাগানে। তাছাড়া এর বাইরে আরও কিছু বরাদ্দ হয়েছে। যেমন উন্নতজাতের লালশাক, পুঁইশাক, ডাঁটা, ঢেড়শ, লাউ সিমসহ অন্তত ১০/১২ জাতের সবজির বীজও দেয়া হয়েছে। সার এবং কীটনাশকও পেয়েছেন প্রান্তিক সবজি চাষীরা। এর সাফল্য সম্পর্কে বর্ণনা করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সিলেটের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র সোম বলেন, কৃষকরা সাইনবোর্ড লাগাতে আগ্রহী নয়। পারিবারিক পুষ্টি বাগানটা হয়েছে মূলতঃ কৃষকদের বাড়িতে। তাই সরকারের এ উদ্যোগটি অতবেশি প্রচার পায়নি। তবে তৃণমূল পর্যায়ের চাষিরা এ বাগান বাবদ সরকারের কাছ থেকে প্রত্যেকে ১ হাজার ৯শ’ ৩৫ টাকা করে পেয়েছেন। এতে তাদের পুষ্টি চাহিদা পুরণের পাশাপাশি সিলেট জেলার ৩ হাজার ২শ’টি পরিবারের সদস্য অল্প হলেও আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন।
বিমল সোম আরও জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা ছাড়াও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আর তাই মুজিববর্ষে সরকারের এ উপহার সিলেটের সবজিচাষিদের জন্য বিশেষ সুফল বয়ে এনেছে বলেও মন্তব করেছেন তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই কৃষি কর্মকর্তা জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার কারণে সিলেটে দিনে দিনে সবজি চাষের আওতা বাড়ছে। তিনি বলেন, সিলেটে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছিল। আর ২০২০- ২১ অর্থবছরে সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর বেড়ে চাষ হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। আগামীতে তা আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
সান নিউজ/এক/এনকে