আদিল সরকার, ইবি: ‘সেই ছোট্ট বিলায় বাপ মইরে যায়। মা একা। টাকার অভাবে কুলায় উঠতে পারে নাই মা। তাই মাইনষের বাড়ি রান্নার কাজ নেয় সে। কদিন বাদেই মায়ের শরীরডা রুগা হয়ে উঠলো। তাই কাজডাও ছাইড়া দেয় মা। কিন্তু দুমুঠো খাওয়ার জন্যি তখন থিকাই ক্যাম্পাসে ভ্যান চালান শুরু করি। এরপর থিকাই বন্ধ হয়ে যায় স্কুলে যাওয়া। তয় এখনও মাঝে মাঝে খুব মুনে চায় পাশের বাড়ির হাসানের লগে বই কান্দে স্কুলে যাতি। কিন্তু তা আর কেম্বা করি হয়। আজ বাপ বাইচে থাকলি হয়তো পড়তি পারতাম।’ এতো ছোট হয়েও তুমি ভ্যান চালাও কেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে ছল ছল চোখে তাকিয়ে আকাশভারি এই গল্প শোনালেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৯ বছর বয়সী ভ্যান চালক জিহান।
বুধবার (১৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শ্রমজীবী শিশুদের নিয়ে এক আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ইবি প্রেসক্লাব’। এসময় শ্রমজীবী শিশুদের জীবন যুদ্ধের গল্প শোনার মধ্য দিয়ে তাদের নিয়ে আনন্দঘনভাবে দিবসটি উদযাপন করেন তারা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিন ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২১ উপলক্ষে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরালের পাদদেশে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করেন ইবি প্রেসক্লাব। এরপর সেখানে শ্রমজীবী শিশুদের গেঞ্জি উপহার দেয় তারা। পরে বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসিতে অবস্থিত প্রেসকর্ণারে শিশুদের জীবনের নানান সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনেন প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ। সভায় শিশুরা তাদের শ্রমজীবী হওয়ার তিক্ত গল্প শোনান। এসময় তাদের কেউ কেউ কে পড়াশোনায় ফিরে যাবারও আক্ষেপ পোষন করতে দেখা যায়।
ইবি প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রুমি নোমানের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম। এসময় কোষাধ্যক্ষ আহসান নাঈম, দপ্তর সম্পাদক মোতাসিম বিল্লাহ পাপ্পু, ক্রীড়া সম্পাদক রায়হান মাহবুব, কার্যনির্বাহী সদস্য আদিল সরকারসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাবের সভাপতি সরকার মাসুম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আজকের এই দিবসে শিশুদের নিয়ে ইবি প্রেসক্লাবের ব্যতিক্রমী এই আয়োজন আসলেই মুগ্ধকর। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত সমাজের দরিদ্র শিশুদের পাশে দাঁড়ানো। কারণ তাদের মাধ্যমেই একটি দেশ তথা একটি জাতিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।
এনিয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতি সরকার মাসুম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় শিশুদের ভালবাসতেন। কিন্তু স্বাধীন দেশের আজ এতটা বছর পার হলেও আমাদের এখনও শিশুদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে হয়। এটা খুবই দুঃখজনক। আজকের এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে সমাজের বিত্তবান মানুষদের শ্রমজীবী শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানাই। দেশের শিশুশ্রমের হার কমিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আমাদের প্রত্যেককে সমাজের পিছিয়ে পড়া এই শিশুদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
এদিকে, প্রেসক্লাবের এ আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, শ্রমজীবী শিশুদের নিয়ে এ আয়োজন আসলেই প্রশংসার দাবিদার। পুরো বাংলাদেশের শিশুদের চিত্র একই। তাই সরকারের পাশাপাশি আমরা সকলে যদি এগিয়ে আসি তাহলেই এ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে।
সান নিউজ/কেটি