নিজস্ব প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল মজিদ চৌধুরী শাকিলের ডিজিটাল ল্যাব স্থাপনের নামে জালিয়াতির তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি তদন্ত করার কথা থাকলেও উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পের নির্দেশে ঢাকা থেকে দুইজন বিশেষজ্ঞ টিম যুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন ইউজিডিপির স্যোসাল এক্সপার্ট সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রাফায়েল ত্রিপুরা ও নেটওয়ার্ক এক্সপার্ট মাসুদুন্নবী।
তদন্ত কমিটিকে নিয়ে তারা রোববার (১৪ মার্চ) সকাল থেকে তদন্তে নামে। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে বলে জানান ইউজিডিপির স্যোসাল এক্সপার্ট সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রাফায়েল ত্রিপুরা।
গত ১০ ও ১১ মার্চ ‘লাখাই উপজেলার দু’টি বিদ্যালয়ের ডিজিটাল ল্যাব স্থাপনের নামে হরিলুট’ সংবাদ প্রকাশ হলে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন।
রোববার সকল ১০টার সময় রাঢ়িশাল করাব উচ্চ বিদ্যালয় এবং দুপুরে তেঘরিয়া এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে কম্পিউটার ল্যাব তদন্ত করে ওই কমিটি। তদন্ত শেষে রাফায়েল ত্রিপুরা সাংবাদিকদের জানান, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে, তবে এই মুহুর্তে সবকিছু বলা যাচ্ছে না। যথা সময়ে আমরা রিপোর্ট পেশ করবো। তদন্তকালে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ এপ্রিল জাইকা’র অর্থায়নে পরিচালিত উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের কর্মসূচীতে লাখাই উপজেলার দুটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কম্পিউটার, টেবিল ও চেয়ার দিয়ে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল সামগ্রী প্রদান ও ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে করাব ইউনিয়নে বড় গোপাটের খাল থেকে আজদার মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত আরসিসি উন্মুক্ত ড্রেন নির্মাণ, দরপত্র আহবান করে এলজিইডি। এক প্রভাবশালী নেতার আর্শীবাদে এ তিনটি কাজেরই ঠিকাদার নিযুক্ত হন ইকরামুল মজিদ চৌধুরী শাকিল।
দরপত্র অনুসারে গত অক্টোবরে উপজেলার রাঢ়িশাল করাব উচ্চ বিদ্যালয় ও তেঘরিয়া এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করেন। দরপত্র অনুযায়ি ‘ডেল কোম্পানীর অপটিপ্লেক্স-৩০২০, কোরআই-৩ মডেলের’ ৪৮টি কম্পিউটার সরবরাহ করেন দুই বিদ্যালয়ে ঠিকাদার শাকিল চৌধুরী। সরবরাহের কয়েকদিন পর তেঘরিয়া এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৪টি ও রাঢ়িশাল করাব উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫টি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে যায়।
ঠিকদারী প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত সবকটি কম্পিউটার বিশ্বখ্যাত ব্রান্ড ডেল কোম্পানীর। কিন্তু সবগুলো কম্পিউটার কমপক্ষে ৪ বছর পূর্বে আমদানী বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশের আমদানীকারকরা। এমনটাই জানা গেছে ষ্টার টেক ও গ্লোবাল ব্যান্ড নামের দুইটি আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপ করে। ডেল’র ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায় সরবরাহকৃত কম্পিউটারগুলোর মধ্যে ২ঋছঔ১০২, ২ঠচঔ১০২ ও ৩ত৮ক১০২ সার্ভিস ট্যাগ যাচাই করে করে দেখা যায়, এগুলো ২০১৪ সালে বাংলাদেশে আমদানী করা হয় আর বিক্রয় করা হয় ২০১৬ সালে। সার্ভিস ওয়ারেন্টি মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত।
এদিকে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত কম্পিউটার ক্রয়ের রশিদ থেকে জানা যায় শাকিল চৌধুরী ‘রিয়েল ওয়ান’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার ক্রয় করেন। রশিদে প্রতিষ্ঠানের যে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে গিয়ে বাস্তবে এমন কোন প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পরে তাদের মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে শিহাব আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করেন। সে জানান, তিনি মূলত: কম্পিউটার সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন। তবে কম্পিউটার সাপ্লাইয়ের অর্ডার পেলে তিনি ঢাকার বিভিন্ন দোকান থেকে সংগ্রহ করে দেন। তিনি আরো জানান, বিক্রয়গত কম্পিউটারের নিজে ১ বছরের ওয়ারেন্টি দেন। নষ্ট হলে তিনি নিজে ঠিক করে দেন।
সান নিউজ/এফসি/এনকে