চট্টগ্রাম ব্যূরো : তিনজন কিশোর, তিনজন কিশোরী। কিশোরীদের বয়স ১২-১৩ বছর। আর কিশোরদের বয়স ১৫। ঢাকার ধামরাই এলাকার একটি স্কুলের শিক্ষার্থী তারা। কিশোরীদের একজন ৫ম, অন্য দুজন ষষ্ট শ্রেণীর শিক্ষার্থী। আর কিশোরদের সবাই নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া। তারা ছয়জনই প্রেমিক জুটি।
কথা ছিল তারা বিয়ে করবেন। আর নিরাপদ জায়গা হিসেবে বেচে নিয়েছেন চট্টগ্রামকে। কিন্তু চট্টগ্রামে তাদের নেই কোন আত্নীয় স্বজন। এমনকি কোন জায়গাও চেনা-জানা নেই তাদের। ফলে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে এসে দিক-বিদিক ঘুরাফেরা শুরু করেন তারা।
বিষয়টি নজরে আসে রেলস্টেশনে ডিউটিরত নগর কোতোয়ালী থানার এসআই জয়নাল আবেদীনের। জিজ্ঞাসাবাদে এলোমেলো উত্তর দেওয়ায় পুলিশের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন তারা। অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে তিন কিশোরী একর্পযায়ে স্বীকার করেন তাদের প্রেম ও বিয়ের কথা। যা শুনে অবাক হন স্বয়ং এসআই জয়নাল আবেদীন।
কিন্তু অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের থানা হেফজতে নিয়ে যান তিনি। ১২ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান এসআই জয়নাল আবেদীন। আর তাতেই বিয়ের শখ ভেস্তে যায় এই ছয় স্কুল শিক্ষার্থীর। এসআই জয়নাল আবেদীন জানান, সবকিছু জেনে এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় ছয় স্কুল শিক্ষার্থীকে শনিবার দুপুরে তাদের মা-বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) নোবেল চাকমা বলেন, শিক্ষার্থীদের বয়স কম। চট্টগ্রামে তাদের কোনো আত্নীয়স্বজন, চেনা-পরিচিত লোকজনও নেই। তারা যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হতে পারত। এই বয়সে বিয়েও আইনসিদ্ধ নয়। আবেগের বশে কিশোর-কিশোরীরা এ ধরনের কর্মকান্ড করেছেন। তাই আমরা তাদের থানায় নিয়ে গেছি। সেখান থেকে তাদের মা-বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কিশোর-কিশোরীরা ঢাকার ধামরাইয়ের একটি স্কুলের শিক্ষার্থী। তারা ছয়জনেই বিয়ে করতে রেলে করে ঢাকার ধামরাই থেকে চট্টগ্রামে আসে শুক্রবার সকালে। সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে তারা রেল স্টেশনে কোতোয়ালী থানার এসআই জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বাধীন পুলিশ টহলের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
এসআই জয়নাল আবেদীন বলেন, সন্ধ্যায় রেল স্টেশন এলাকায় তিনজন কিশোর ও তিনজন কিশোরীকে সন্দেহজনকভাবে ঘুরাফেরা করতে দেখলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তারা এলোমেলো উত্তর দিলে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ঢাকা থেকে পালিয়ে তিনজনই বিয়ে করতে চট্টগ্রামে আসার কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ছোট-ছোট শিশুদের মুখে বিয়ের কথা শুনে আমি হতবাক হই। পরে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের থানায় নিয়ে আসি। কিশোর-কিশোরীরা জানান, বিয়ে করার জন্য বৃহ¯পতিবার দুপুরে তারা পরিকল্পনামতে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর কমলাপুর স্টেশনে এসে চট্টগ্রামগামী ট্রেনের টিকিট কেটে তূর্ণা-নিশিথায় করে রাতে চট্টগ্রামের পথে রওনা দেয়। সকালে চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছলেও এখানকার পথঘাট চেনা-জানা না থাকায় স্টেশন এলাকাতেই দিন পার করে। পরে সন্ধ্যায় পুলিশের হাতে আটক হয় তারা।
কিশোর-কিশোরীদের দাবি, এক বান্ধবীকে বাল্যবিয়ে থেকে বাঁচাতে প্রেমিককে বিয়ে করতে পালান তারা। ওই বান্ধবী পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী, বয়স ১২, প্রেমিকের বয়স ১৫ বছর। তাদের সাথে অন্য দুই কিশোর-কিশোরীও বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। তাই তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামে আসে। বিয়ের জন্য তাদের পোশাকও কেনা হয়।
পুলিশ জানায়, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তাদের কাছে ছিল মাত্র ছয় হাজার টাকা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসতেই তাদের বেশকিছু টাকা খরচ হয়ে যায়। রাতে থাকার জন্য অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরেও পরিচিত ব্যক্তির সন্ধান না পেয়ে তারা অটো চালকের কাছে রাতযাপনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার সহায়তা চান।
ওই অটোচালক তার নিজের অটো ভাড়া বাবদ সাড়ে ৬০০ টাকা নিয়ে ফ্রি-পোর্ট এলাকায় একটি স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে এক নারীর মাধ্যমে রাতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় একটি বাসায়, যার জন্য ওই নারীকে তাদের দিতে হয়েছে ৭০০ টাকা ঘর ভাড়া। কিন্তু তার আগেই সন্ধ্যায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তারা। এতে বিয়ের শখ ভেস্তে যায় তাদের।
সান নিউজ