নিজস্ব প্রতিনিধি, মোংলা (বাগেরহাট) : মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের নাব্য ঠিক রাখতে ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নদী খনন ও ড্রেজিং প্রকল্প কাজ শুরু হচ্ছে।
শনিবার ( ১৩ মার্চ ) নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ড্রেজিং কাজের উদ্বোধন করবেন।
বন্দর সূত্র জানায়, মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্পের পরামর্শক হিসাবে সিইজিআইএসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চীনের হংকং রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ও লি. ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন জেভি করপোরেশন নামের প্রতিষ্ঠান দুটি ৭১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে আউটার বার চ্যানেলের কাজ শেষ করেছে। ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরের যাত্রা শুরু হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছেন, এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বন্দর চ্যানেলের নাব্য সংকটের দূর হওয়াসহ দেশি-বিদেশি পণ্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন-নির্গমন সহজ ও নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া বন্দরের জাহাজ আগমন ও আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পাবে। এতে বন্দরের বাণিজ্যিক সম্ভাবনার পাশাপাশি রাজস্ব আয়ও কয়েকগুণ বাড়বে।
বাংলাদেশে যেসব কনটেইনারবাহী জাহাজ আসে সেগুলো পূর্ণ লোড অবস্থায় ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ সরাসরি মোংলা সমুদ্র বন্দরে প্রবেশ করতে পারে না। এ কারণে অধিকাংশ জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস শেষে মোংলা বন্দরে ভিড়তে হয়। এতে মোংলা বন্দরে আসা বাণিজ্যিক জাহাজের অতিরিক্ত সময় ও খরচ বৃদ্ধি পায়।
এ কারণে বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করেন। এছাড়া পদ্মা সেতু চালু হলে এ বন্দরের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের চাপ কয়েকগুণ বাড়বে। আর ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে ভারত, নেপাল ও ভুটানের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। এসব বিষয় মাথায় রেখে মোংলা প্রবেশ মুখ আউটার বার ও ইনার বার চ্যানেলে ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যেগ নেয়া হয়েছে।
মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্প কর্মকর্তা প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী (সি ও হা.) শেখ শওকত আলী জানান, ২০২০ সালে এ প্রকল্পটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেয়া হয়। এ প্রকল্পটি অনুমোদনের পর দরপত্রে কাজ পায় চীনের হংকং রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লি. ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন জেভি করপোরেশন নামের দুটি প্রতিষ্ঠান।
২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ড্রেজিং প্রকল্প কাজের চুক্তি সই করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, প্রকল্পের কাজ ৩টি কাটার সাকশান ড্রেজার ও দুটি ট্রেইলিং সাকশান হপার ড্রেজারের সমন্বয় করা হবে। আর ৭টি কম্পার্টমেন্ট ফেলা হবে নদীর খননের পলি মাটি। জিওবির অর্থায়নে এ প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুনের মধ্যে ড্রেজিং শেষ হবে।
ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু হলেও নৌ পরিবহণ বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া থেকে পশুর নদীর মোহনায় হিরণ পয়েন্ট থেকে গভীর সমুদ্রের হংসরাজ বয়া পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার নদীর নাব্য কম থাকায় দীর্ঘদিন ধরে পণ্যবাহী বড় জাহাজ আগমনে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়ে আসছিল।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মাদ মুসা জানান, আউটার বার ড্রেজিং কাজ শেষ হওয়ায় এখন অনায়াসে পণ্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ এ বন্দরে প্রবেশ করতে পারে। এখন আগের সেই ভোগান্তি নেই। ইনার চ্যানেলের ড্রেজিং সম্পন্ন হলে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারেব। ফলে এ বন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানি-রফতানি বৃদ্ধিসহ বাড়বে রাজস্ব আয়।
সান নিউজ/এসএ