এনামুল কবীর, সিলেট : কান্নাটা শুরু হয়েছিল আগেই। শঙ্কা আর হতাশার কান্না। তিনি সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি- এমন খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন গোটা নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষ। আর দলীয় নেতাকর্মীদের কথাতো বলাই বাহুল্য। এখন আর সেই উদ্বেগ উৎকন্ঠা পরিণত হয়েছে শোকে।
সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের মৃত্যুতে শোকে পাথর তার নির্বাচনী এলাকাসহ বৃহত্তর সিলেটের মানুষ। এমন কি কেউ কেউ কাঁদছেন রীতিমতো হাউমাউ করে।
ফেঞ্চুগঞ্জ-দক্ষিণ সুরমা ও বালাগঞ্জের একাংশ নিয়ে সিলেট-৩ সংসদীয় আসন। এই আসনের হ্যাট্রিক সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। উন্নয়নের অনেক বড়বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে তার হাত ধরে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তার সহযোগিতার দ্বার সবসময় উন্মুক্তই ছিল।
আর তাই তাঁর মৃত্যুতে শোকে পাথর সর্বস্তরের জনগন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন টিভি চ্যানেলগুলোতে কথা বলতে গিয়ে অনেক ভক্ত অনুরাগীকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা গেছে।
তাছাড়া তারঁ মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে দলে দলে মানুষ ছুটতে থাকেন ফেঞ্চুগেঞ্জর নুরপুরে, তাঁর বাড়িতে। শুধু স্থানীয়রাই নয়, ছুটে যাচ্ছেন সিলেট শহর থেকেও। প্রিয় এই মানুষটার স্মৃতি হাতড়ে বেড়াতে বেড়াতে কাঁদছেন তারা।
দক্ষিণ সুরমার নুরজাহান মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন তরফদার মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস সম্পর্কে বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, তার সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক মৃতপ্রায় প্রতিষ্ঠানও শুধু সজিবই হয়নি, বরং মহীরুহে পরিণত হয়েছে। এই মানুষটাকে হারিয়ে আমরা আজ দিশাহারা।
তিনি বলেন, এলাকায় এসে যে ক’দিন থাকতেন সে ক’দিন স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ব্যয় করতেন। গরীব-দুখির কল্যাণে কাজ করতেন। কাজের ব্যাপারে কখনো তাকে ক্লান্ত মনে হয়নি।
এমন একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধির অসুস্থতার খবর পেয়ে বুধবার পুরো নির্বাচনী এলাকাজুড়ে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন তার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করেছে।
দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্টিত হয়েছে। এছাড়া সিলেট মহানগর শ্রমিকলীগ, লালাবাজারে ভক্ত অনুরাগী, আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে তার সুস্থতা কামনা করেছেন।
তিনি মাহমুদ উস সামাদ ও ফারজানা চৌধুরী গার্লস স্কুলের শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন কাঁদতে কাঁদতে। তারা জানান, তিনি সন্তানের মতোই তাদের স্নেহ করতেন। সবসময় তাদের খোঁজখবর নিতেন। তিনি শিক্ষকদের অত্যন্ত মর্যাদা দিতেন। বলতেন, তারা হলেন জাতির গড়ার কারিগর।
ফেঞ্চুগঞ্জ-দক্ষিণ সুরমা ও বালাগঞ্জের সচেতন মানুষ জানান, শুধু শিক্ষক বা দলীয় নেতাকর্মীদের জন্যই নয়, সামাদ চৌধুরী কয়েসের দ্বার আমীর ফকিরসহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল। সবার ভালোবাসার পাত্র ছিলেন তিনি। তার শোকে আজ শোকাহত জনপদ কাঁদছে, কাঁদছে সাধারণ মানুষ।
সান নিউজ/ইকে/এনকে