এনামুল কবীর, সিলেট : সিলেট বিভাগের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার শিক্ষক কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন। ৩০ মার্চের আগে সেটি শতভাগ না হলেও আরও অনেকেরই টিকা নেয়া হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বারবার তারিখ ঘোষণা ও স্থগিতের পর ৩০ মার্চ নিয়ে সন্দেহের দোলাচলে দুলছেন শিক্ষক অভিভাবকরা। এদিকে সিলেটের সচেতন মহল মনে করছেন, আরও আগে স্কুলগুলো খুলে দেয়া উচিৎ ছিল। অন্তত একেক দিন একেকটা শ্রেণীর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারলে শিক্ষাক্ষেত্রে এতটা পিছিয়ে পরতোনা শিক্ষার্থীরা। এজন্য তারা দোষছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটা বছর হারিয়ে গেলো।
এদিকে সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছেন শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারিরা। ৩০ মার্চ স্কুলগুলো খুললেও সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক সময়ের মতো চলবেনা। ৫ম ও দশম শ্রেণীর জন্য পুরো সপ্তাহ খেলা থাকলেও অন্যান্য শ্রেণীর পাঠদান কার্যক্রম চলবে সপ্তাহে মাত্র ১দিন করে। তাছাড়া, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য আপাতত স্কুল খুলছেনা। দীর্ঘ ছুটির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার রমজানের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা মেনে সিলেট বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষকবৃন্দ করোনার ভ্যাক্সিন গ্রহণ করছেন সোৎসাহে। যদিও এখনো মোট শিক্ষকের অর্ধেকের কিছু বেশি ভ্যাক্সিন গ্রহণ করেছেন। অন্যান্যরাও নিচ্ছেন। ৩০ মার্চের আগে সেটি শতকরা ৭০/৮০ ভাগ হতে পারে।
সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মোট ২৬ হাজার ৯শ’ ৩৯ জন শিক্ষক রয়েছেন। এদের মধ্যে কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১৮ হাজার ৫শ’ ২৭ জন। এরমধ্যে বুধবার পর্যন্ত নিয়েছেন ১৪ হাজার ৩শ’ ৬৪ জন। শুধু সিলেট জেলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত ভ্যাক্সিন নেয়ার হার প্রায় ৬৫ বলে জানিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষাকর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন। মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় মোট ৮ হাজার ৩শ’ ৪১ জন শিক্ষকের মধ্যে ভ্যাক্সিন নিয়েছেন ৩ হাজার ৭শ’ ৬ জন শিক্ষক। সুনামগঞ্জে মোট ৬ হাজার ৪শ’ ৪৯ জনের মধ্যে ভ্যাক্সিন নিয়েছেন ৪ হাজার ৩শ’ ১৫ জন, হবিগঞ্জের মোট ৫ হাজার ৭৫৫ জনের মধ্যে ভ্যাক্সিন নিয়েছেন ৪ হাজার ৩শ’ ৯১ জন, মৌলভীবাজারে মোট ৫ হাজার ৬শ’ ২৬ জনের মধ্যে ভ্যাক্সিন নিয়েছেন ৪০৪৩ জন।
এদিকে সিলেটের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর একাধিক শিক্ষকের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, সরকারের নির্দেশনা মেনেই তারা কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে হাতধোয়ার জন্য বেসিন তৈরি হচ্ছে অনেক স্কুলে। শিক্ষার্থী অনুপাতে ম্যানেজিং কমিটির সাথে আলোচনা করেই তারা কাজ করছেন। তাছাড়া যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্যানিটেশনের ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়, সেগুলো উন্নত করা হচ্ছে। স্কুল খোলার পর শিক্ষার্থীদের জন্য আরও সচেতনতামূলক কাজ করা হবে। দলবদ্ধ হয়ে না চলা, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বসা, হাত মেলানো বা গলাগলিতে নিষেধাজ্ঞা, বহুজন ব্যবহৃত বস্তুগুলোতে বারবার ধোয়া, পর্যাপ্ত স্যানিটাইজার সংরক্ষণ, স্কুলে অভিভাবকরা এলে তাদেরকেও নিরাপদ দূরত্ব রেখে বসার ব্যাপারে সচেতন করা, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে নিরুৎসাহিত করা, স্কুলে আসার পর কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ছুটি দেয়া, স্কুলে তাপমাত্রা মাপার জন্য প্রয়োজনীয় থার্মোমিটার সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যবস্থা রাখা। আর ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’তো আছেই।
এই নির্দেশনাগুলোর আলোকেই চলবে মহামারিকালিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে সিলেট সরকারি পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক কবীর খাঁন বলেন, আমাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। সরকারের নির্দেশনার আলোকে আমরা স্কুল খোলার প্রস্তুতি নিয়েছি। পাঠদান কার্যক্রমও চলবে বেশ ভালোভাবে।
তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে আসা ও অবস্থানের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখার জন্য সব অভিভাবকের প্রতি আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে আলাপকালে গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমকুনা-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিম উদ্দিন বলেন, আমি সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। হাতধোয়ার জন্য কয়েকটি বেসিন প্রস্তুত করেছি, স্যানিটেশন ব্যবস্থা যতটুকু সম্ভব উন্নয়ন করেছি। অন্যান্য নির্দেশনা এবং নির্দেশনার বাইরে বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।
তিনি এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটিসহ স্থানীয় সচেতন মানুষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন। প্রায় একইরকম জানালেন, দক্ষিণ সুরমার চকেরবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপ্লবী পাল। এদিকে সিলেটের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের মধ্যে করোনার ভ্যাক্সিন কতজন রেজিস্ট্রেশন করলেন বা ইতিমধ্যে কতজন নিয়েছেন সেটি এখনো জানাতে পারেন নি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ। তিনি জানান, উপজেলা পর্যায় থেকে তথ্য আসতে আরো ৩/৪ দিন লাগবে।
সান নিউজ/এক/এনকে