ফয়সল চৌধুরী, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার রাঢ়িশাল করাব উচ্চ বিদ্যালয় ও তেঘরিয়া এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের নামে হরিলুটের ঘটনা ঘটেছে। পুরাতন কম্পিউটার কোন রকমে সচল করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে।
ফলে কিছুদিন যেতেই দুই বিদ্যালয়ের ১৯টি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে যায়। শুধু তাই নয় যে প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার ক্রয় করেছেন তার কোন অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। পুরাতন কম্পিউটার দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই প্রকল্পের ঠিকাদার ও লাখাই উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল মজিদ চৌধুরী শাকিল। ওই প্রকল্পের আওতাধীন লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন ও দন্ত চিকিৎসার যন্ত্রপাতি সরবরাহের দায়িত্ব নিলেও তিনি এখন পর্যন্ত তা সরবরাহ করেননি।
ঠিকাদার ইকরামুল মজিদ চৌধুরী শাকিল দাবি বিদ্যুতের সমস্যার কারণে কম্পিটারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি এগুলো ঠিক করে দিবেন। এ বিষয়ে লাখাই উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
জানা যায়, গত বছরের ৩০ এপ্রিল জাইকা’র অর্থায়নে পরিচালিত উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের কর্মসূচীতে লাখাই উপজেলার দুটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কম্পিউটার, টেবিল ও চেয়ার দিয়ে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল সামগ্রী প্রদান ও ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে করাব ইউনিয়নে বড় গোপাটের খাল থেকে আজদার মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত আরসিসি উন্মুক্ত ড্রেন নির্মাণ, দরপত্র আহবান করে এলজিইডি। এক প্রভাবশালী নেতার আর্শীবাদে এ তিনটি কাজেরই ঠিকাদার নিযুক্ত হন ইকরামুল মজিদ চৌধুরী শাকিল। দরপত্র অনুসারে গত অক্টোবরে উপজেলার রাঢ়িশাল করাব উচ্চ বিদ্যালয় ও তেঘরিয়া এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করেন।
দরপত্র অনুযায়ী ‘ডেল কোম্পানীর অপটিপ্লেক্স-৩০২০, কোরআই-৩ মডেলের’ ৪৮টি কম্পিউটার সরবরাহ করেন দুই বিদ্যালয়ে ঠিকাদার শাকিল চৌধুরী। সরবরাহের কয়েকদিন পর তেঘরিয়া এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৪টি ও রাঢ়িশাল করাব উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫টি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে যায়।
ঠিকদারী প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত সবকটি কম্পিউটার বিশ্বখ্যাত ব্রান্ড ডেল কোম্পানীর। কিন্তু সবগুলো কম্পিউটার কমপক্ষে ৪ বছর পূর্বে আমদানী বন্ধ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের আমদানীকারকরা। এমনটাই জানা গেছে ষ্টার টেক ও গ্লোবাল ব্যান্ড নামের দুইটি আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপ করে।
ডেল’র ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায় সরবরাহকৃত কম্পিউটারগুলোর মধ্যে লাগানো ( ২ঋছঔ১০২, ২ঠচঔ১০২ ও ৩ত৮ক১০২) সার্ভিস ট্যাগ যাচাই করে করে দেখা যায়, এগুলো ২০১৪ সালে বাংলাদেশে আমদানী করা হয় আর বিক্রয় করা হয় ২০১৬ সালে। সার্ভিস ওয়ারেন্টি মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত।
এদিকে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত কম্পিউটার ক্রয়ের রশিদ থেকে জানা যায় শাকিল চৌধুরী ‘রিয়েল ওয়ান’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার ক্রয় করেন। রশিদে প্রতিষ্ঠানের যে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে গিয়ে বাস্তবে এমন কোন প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
পরে তাদের মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে শিহাব আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করেন। সে জানান, তিনি মূলত: কম্পিউটার সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন। তবে কম্পিউটার সাপ্লাইয়ের অর্ডার পেলে তিনি ঢাকার বিভিন্ন দোকান থেকে সংগ্রহ করে দেন। তিনি আরও জানান, বিক্রয়গত কম্পিউটারের নিজে ১ বছরের ওয়ারেন্টি দেন। নষ্ট হলে তিনি নিজে ঠিক করে দেন।
ঠিকাদার ইকরামুল মজিদ চৌধুরী শাকিল বলেন-বিদ্যুতের সমস্যার কারণে এগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। কোম্পানীর লোকজন এসে ঠিক করে দিবেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে বারবার তার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ ব্যাপারে তেঘরিয়া এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম আলম বলেন- আমাদের বিদ্যালয়ের ১৪টি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। তারা ঠিক করে দিবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
লাখাই উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন- এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু উপজেলা চেয়ারম্যান এই প্রকল্পের প্রধান তাই আমি একটি নোট দিয়েছি।
সান নিউজ/এফসি/এনকে