ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম ব্যূরো : চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তা দেয়াল টপকে পালিয়ে যায় হাজতি ফরহাদ হোসেন রুবেল। কারা অভ্যন্তরের সিসিটিভ ফুটেজ দেখে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন কারা অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি। তবে পালিয়ে শেষ রক্ষা হলো না তার। পুলিশের অভিযানে নরংসিংদী থেকে গ্রেপ্তার হয় সে।
৯ মার্চ মঙ্গলবার সকালে এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন। তিনি জানান, ফরহাদ হোসেন রুবেলকে নরসিংদী জেলার রায়পুর থানার বাল্লাকান্দি চর এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হচ্ছে। সে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মীরেরকান্দি গ্রামের শুক্কুর আলী ভান্ডারির ছেলে।
ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, রুবেল কারাগারের উচু নিরাপত্তা দেয়াল টপকে পালানোর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর, ধারণা করা হয় সে নিজ জেলা নরসিংদীতে অবস্থান নিতে পারে। সে হিসেবে নরসিংদী জেলা ও রায়পুরা থানার পুলিশ মাঠে কাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে নিশ্চিত হওয়ার পর সেখানে অভিযান চালানো হয়। শেষে রায়পুরা থানার বাল্লাকান্দি চর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। চট্টগ্রামে নিয়ে আসার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে গত ৬ মার্চ শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা হত্যা মামলার হাজতি ফরহাদ হোসেন রুবেল উধাও হয়ে যান। এ ঘটনায় শনিবার সকালে নগরীর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরির (জিডি) পর রাতে মামলা করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় কারা অধিদপ্তর তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে। কমিটিতে কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. ছগীর মিয়াকে প্রধান করা হয়। তার সাথে রাখা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের সুপার ইকবাল হোসেন এবং বান্দরবান জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার ফোরকান ওয়াহিদকে।
৮মার্চ সোমবার বিকেল থেকে তদন্ত কাজ শুরু করেন এই কমিটি। প্রথমে কারাগারের নিরাপত্তার বিষয়ে খোঁজ নেন কমিটির সদস্যরা। পরে কারাগারের যেসব সিসি ক্যামেরা রয়েছে, তার ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে তদন্ত কমিটি। এক পর্যায়ে রাতে কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হন, রুবেল ফাঁসির মঞ্চ ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নিরাপত্তা দেয়াল টপকে পালিয়েছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান ছগীর মিয়া জানান, অন্যান্য বন্দির সাথে রুবেলকে রাখা হয়েছিল কর্ণফুলী ভবনের ছয়তলায় ১৫ নম্বর “পানিশমেন্ট” ওয়ার্ডে। যেসব বন্দি অপরাধ করে তাদের ওই ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা সেখানে বন্দি রাখা হয়।
কিন্তু সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, কর্ণফুলী ভবনের নিচতলা দিয়ে বের হয় রুবেল। ৫টা ১৫ মিনিটে আরেকটি সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, বন্দি রুবেলকে ফাঁসির মঞ্চের পাশের ভবন থেকে সীমানা দেয়ালের বাইরে লাফ দিতে। ফলে এটা প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত যে, রুবেল কারাগার থেকে পালিয়েছে।
কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান জানান, ৫ মার্চ শুক্রবার চট্টগ্রাম কারাগারের ১৫ নম্বর কর্ণফুলী ভবনের পানিশমেন্ট ওয়ার্ডে হত্যা মামলার আসামি ফরহাদ হোসেন রুবেলসহ অন্য আসামিদের রুমে তালাবদ্ধ করে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শনিবার ভোর ৬টায় যখন আবার কক্ষের তালা খোলা হয় তখন হাজতিদের রোলকল করা হয়। তখনই সন্ধান মিলছিল না হাজতি রুবেলের।
কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যেও তালাবদ্ধ একটা ভবন থেকে একজন হাজতির হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় কারা অভ্যন্তরে। কারা অভ্যন্তরে ওই হাজতি লুকিয়ে থাকতে পারে ধারণা করে সেখানে ব্যাপক তল্লাশিও চালানো হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশও কারাগারে প্রবেশ করানো হয়।
এ ঘটনায় শনিবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার রফিকুল ইসলাম ও ডেপুটি জেলার আবু সাদাতকে প্রত্যাহার এবং দুই কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করে কারা অধিদপপ্তর। পাশাপাশি একজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে।
এর আগে কোতোয়ালী থানায় দায়ের করা মামলায় ডেপুটি জেলার উল্লেখ করেন, শনিবার (৬ মার্চ) ভোর ৬টা থেকে তালামুক্ত করার পর ফরহাদ হোসেন ওরফে রুবেল নামে এক হাজতিকে পাওয়া যাচ্ছে না। যার হাজতি নম্বর ২৫৪৭/২১। সে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সদরঘাট থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আসেন। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানায়।
প্রসঙ্গত, সদরঘাট থানার এসআরবি রেল গেইট এলাকায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে আবুল কালাম আবু নামের এক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে বুকে ছুরিকাঘাত করেন। পরদিন সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল কালাম হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় কালামের মা মর্জিনা বেগম সদরঘাট থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রুবেল কারাগারে যান।
সান নিউজ/