নিজস্ব প্রতিনিধি, রংপুর : রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার এক স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার দুই মাস পর তাকে ধর্ষণের একটি ভিডিও রোববার (৭ মার্চ ) ফাঁস হয়েছে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ ও গোপন ভিডিও ধারণ করে প্রতারক হাফিজুর রহমান। পরে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকির মুখে লোকলজ্জার ভয়ে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে।
এমন গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে হাফিজুর রহমান ও তার সহযোগী বিপুল চন্দ্রের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর থেকে প্রভাবশালী হাফিজুরের পরিবারের হুমকির মুখে নিহত ছাত্রী সীমা রানী দাশের মা ডলি রানী দাশ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সোমবার (৮ মার্চ ) দুপুরে লোহানীপাড়া ইউনিয়নের সদস্য ফজু মিয়া ভিডিও ফাঁসের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ওই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে গত ৫ জানুয়ারি বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নে কাঁচাবাড়ি হিন্দুপাড়া গ্রামে। ভিডিও ফাঁসের ঘটনা ঘটে রোববার দুপুরে। এঘটনা প্রকাশ হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়।
পরে কাঁচাবাড়ি বাজারে বিপুলের মোবাইল ফোন সেট কেড়ে নেন হাফিজুরের বন্ধু রাসেল, শহীদুল ও ইউপি সদস্য ফজু মিয়া।
অনুসন্ধানে ও প্রতিবেশিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ছাত্রী ছিল সীমা রাণী দাশ। বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে একই এলাকার কাঁচাবাড়ি নয়াপাড়ার ইউনুস আলী মেম্বারের ছেলে হাফিজুর রহমানের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে সীমার ওপর। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে হাফিজুর শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন তার সঙ্গে। পরে তাকে ধর্ষণের ঘটনা মোবাইলে তার সহযোগী বন্ধু বিপুল চন্দ্রকে দিয়ে ভিডিও ধারণ করে। বিষয়টি স্কুলছাত্রী সীমা রানী দাশ জানতে পারলে সে হাফিজুরকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু বিয়ে না করে পক্ষান্তরে পরে ভিডিও যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে ওই ছাত্রীকে কয়েকদফায় ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পর লোকলজ্জার ভয়ে ও অপমানে আত্মহননের পথ বেছে নেয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সীমা রাণী দাশ।
ওই স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার পর থেকে হাফিজুরের পরিবার নিহত ছাত্রীর মাকে হুমকি দিয়ে আসছিল যে, প্রকৃত ঘটনা যেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গণমাধ্যমের কাছে গোপন রাখা হয়। ফলে তিনি এ নিয়ে কাউকে কিছু বলতে সাহস পায়নি।
ভিডিও ফাঁসের ঘটনা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে গুঞ্জন শুরু হলে আবারও হুমকি দেয়া হয় সীমা রাণী দাশের মা ডলি রাণী দাশকে। স্বামী মাখন চন্দ্র দাশ দুরারোগ্য ব্যাধিতে ৮ বছর আগে মারা যান। তিনি ৩ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। দুই মেয়ের বিয়ের পর ছোট সীমা রাণী দাশকে লেখাপড়া শিখিয়ে আত্মনির্ভর করার স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। কিন্তু মেয়ের আত্মহত্যার পর সে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলেও তিনি এখন নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সীমার মা ডলি রাণী দাশ বাড়িতে নেই। গোটা বাড়ি ফাঁকা পড়ে আছে। আত্মহত্যার বিষয়টি সম্পর্কে প্রতিবেশীর কাছে জানতে চাইলে এ নিয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
প্রতিবেশী চন্দনা রাণী ও সাগর রায় বলেন, সীমার মা ডলি রাণী দাশ কয়েকদিন ধরে বাড়িতে থাকেন না।
লোহানীপাড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ফজু মিয়া বলেন, ‘ওই ছাত্রীর একটি আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশের ঘটনার কথা শুনেছি। মানসম্মানের ভয়ে মেয়েটি নাকি আত্মহত্যা করে। তার পরিবার হতদরিদ্র। ধার-দেনা করে মেয়েটির লাশ রংপুর থেকে নিয়ে এসে দাহ করা হয়।
হাফিজুরের বাবা ইউনুছ আলী মেম্বার বলেন, আমার ছেলে এর আগে দুইটি বিয়ে করে। পরে তালাক হয়ে যায়। কিন্তু এরমধ্যে সে এমন ঘটনা ঘটাবে তা তিনি জানেন না। অভিযুক্ত হাফিজুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র। জীবনে চলতে গেলে এরকম অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে।
বদরগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, ওই সময় থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। এখন নিহতের পরিবারের কেউ একজন অভিযোগ করলে আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা নেওয়া যাবে। তবে ঘটনাটি যেহেতু স্পর্শকাতর এ জন্য গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে।
সান নিউজ/এইচএস/এনকে