সারাদেশ

জীবনযুদ্ধে হার না মানা নারী নুসরাত তিশা

নিজস্ব প্রতিনিধি, ভোলা : একজন হার না মানা নারীর নাম নাহিদ নুসরাত তিশা। তার কথা একটাই আমি পারি, আমি পারবো, আমাকে পারতেই হবে। দুনিয়াতে অসাধ্য বলতে কিছু নেই, এগিয়ে যাওয়ার জন্য শুধুমাত্র ইচ্ছা শক্তি, সৎ সাহস এবং সৎ হওয়া প্রয়োজন।

দ্বীপজেলা ভোলায় চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট এই মেয়েটির জন্ম হয় ১৯৮৯ সালের ৬ জুন। মা ছিলেন সরকারি চাকুরীজীবি এবং বাবা ব্যবসায়ী। ছোট বেলা থেকেই ছিলেন ভীষণ চঞ্চল, শিখেছেন মার্শাল আর্ট। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন দুরন্তপনার জন্য তার বাম হাত ভেঙ্গে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে দমিয়ে রাখার সাধ্য কার! লেখালেখীর হাত ও ছিল বেশ। পত্রিকায় মাঝে মধ্যে তার লেখা ছাপা হতো। এভাবেই শেষ হলো তার স্কুল জীবন।

বাবা চাইতেন সে ডাক্তার হবে এবং মা চাইতেন ভালো একটা সরকারি চাকুরী করুক নাহিদ। কিন্তু নাহিদের স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়া, যা সে কাউকে
বলতে পারে নি। এইচ.এস.সি তে থাকাকালীন তিনি চ্যানেল আইয়ের সেরা রাধুনীতে অংশগ্রহণ করলেন। তার উদ্দেশ্য ১ম, ২য় বা ৩য় হওয়া নয় উদ্দেশ্য হলো অংশগ্রহণ করা। এইচএসসি শেষ হতে না হতে পরিবারের অমতে বিয়ে করলেন ভালোবাসার মানুষটিকে। কিন্তু সময়টা তার পক্ষে ছিল না। সংসার জীবনটা ছিল ঝামেলাময়।

শারীরিক মানসিক এবং সামাজিক অত্যাচারের মুখোমুখি হতেন প্রতিনিয়ত। হিসাব বিজ্ঞানে অনার্সে ভর্তি হয়ে ও শেষ করতে পারলেন না পড়াশুনা। নিজের প্রয়োজনে ২০১২ সালে শুরু করলেন হ্যান্ডিক্রাফট এর বিজনেস, আর নিজের উপার্জনে আবার পড়াশোনা শুরু করলেন।
পাসকোর্স করতে হলো কারণ ততোদিনে আর অনার্স করার সুযোগ ছিল না।

এদিকে ১ম সন্তানের ২ বছর পরে এলো তার ২য় সন্তান, কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন নেই। এর মধ্যে তার স্বপ্ন এসে ধরা দিয়েছিল হাতে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেছিলেন কাতার এয়ারওয়েজে। ইন্টারভিউর জন্য মেইল আসলো। সবই ঠিক ছিল, কিন্তু সুযোগ থাকা স্বত্বে ও সে চাকুরীটা করতে পারলেন না পরিবারের জন্য। সুযোগ এসেছিল নির্বাচন কমিশনে চাকুরী করারও কিন্তু তাও পারলেন না।

২০১৫ সালে এসে তাকে হ্যান্ডিক্রাফটের বিজনেস ও বন্ধ করে দিতে হলো। ২০১৬ সালে বিউটিফিকেশনের ওপর একটি কোর্সে ভর্তি হন। বিউটিফিকেশন কোর্স চলাকালীন অবস্থাতেই সিদ্ধান্ত নেন পার্লার দেওয়ার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিক করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “রাহা ব্রাইডাল হাউজ” নামে একটি পেজ খোলেন প্রচারণার জন্য।

পারিবারিক অশান্তি যেনো বেড়েই চলছে। কোনো ভাবেই তার সংসার টিকলো না। ২০১৭ সালে বিচ্ছেদ হলো। তিনি তার বিচ্ছেদের জন্য কাউকে দোষ দেন না। তিনি মনে করেন সৃষ্টিকর্তা যা ভাগ্যে রেখেছেন তাই হবে। কারণ তিনিই উত্তম পরিকল্পনাকারী। বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি পুরোপরি নিঃস্ব। দুটি সন্তান নিয়ে পুরোপরি একা। বাবার বাড়ির লোকজনও পাশে ছিল না তার। কিন্তু নাহিদ তো থেমে যাওয়ার পাত্রি না। তিনি সিদ্বান্ত নিলেন যারা আজ তার যোগ্যতা নিয়ে আঙ্গুল তুলেছেন তারাই যেনো একদিন অনুপ্রেরণা হিসাবে নেয় তাকে।

এভাবে তিনি নিজেকে গড়ে তুলবেন। দুই সন্তান নিয়ে একটা বাসা ভাড়া নিলেন। কিন্তু মাস শেষে বাসা ভাড়া কিভাবে দিবেন তা জানতেন না জানতেন না সেদিন দুপুরে কি রান্না হবে। ছয়-সাত দিন ভেবে ফেসবুকে একটা পেইজ এবং গ্রুপ করে পার্লার ব্যবসা শুরু করলেন নিজের বাসায় কোন রকম ডেকোরেশন ছাড়াই, নাম মাত্রই পার্লার। মফস্বল শহরের মেয়ে বলে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল, অনেক অনেক বাধা আসলো, সমালোচনা হলো।

কিন্তু নাহিদ সব কিছুকে তুচ্ছ করে তার মতো জীবন যুদ্ধ শুরু করলেন। নাহিদের বিশ্বাস আমি যখন সফল হবো তখন এরাই আমাকে নিয়ে গর্ব
করবে। যে সমাজ আমার বিপদে আমার পাশে নেই সেই সমাজের জন্য কেন আমি থেমে যাব। কেমন আছি তো দূরের কথা, বেঁচে আছি কিনা
জিজ্ঞেস করার যার কেউ সে কেন থেমে যাবে। নিজের এই জেদ কে শক্তি হিসেবে নিলেন নাহিদ। শূন্য হাতে বিজনেস শুরু করে তার ১ম উপার্জন হলো ২,৯০০/- (দুই হাজার নয়শত) টাকা। এরপর আস্তে আস্তে পথচলা শুরু। বছর খানেক পরেই বুটিক হাউজ দিলেন পার্লারের সাথে। এরপর বিভিন্ন কোর্স করতে প্রায় ঢাকা যেতেন নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি বড় করতে।

নাহিদ বিশ্বাস করেন দুনিয়াতে অসাধ্য বলতে কিছু নেই। আমি পারি, আমি পারবো, এবং আমাকে পারতেই হবে। প্রবল আত্মবিশ্বাস আর ইচ্ছাশক্তি নিয়ে তার সামনে এগিয়ে চলা অব্যাহত রইল। ২০১৭ সালে তার বাম পা এবং ২০১৮ সালে ডান পা ভেঙ্গে গিয়েছিল অসাবধানতাবশত। কিন্তু কোন কিছু তাকে দমিয়ে রাখতে পারে নি। প্রবল ইচ্ছা শক্তি নিয়ে তিনি এগিয়ে চলছেন।

এরপর ২০১৯ সালে বেস্ট বিউটিশিয়ান এওয়ার্ড এর জন্য নমিনেশন পেলেন এবং এওয়ার্ড পেলেন। এরপর বেগম রোকেয়া সম্মাননা, জাতীয় নারী উদ্যোক্তা সম্মাননা ২০২০ এর ৯ ডিসেম্বর পেলেন শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা সহ অনেক অনেক পুরস্কার পেলেন।

এর মধ্যে শুরু করলেন খাবারের বিজনেস। প্রথম বারের মত ভোলার মানুষকে হোম ডেলিভারী সার্ভিসের সাথে পরিচিত করালেন। শুরু হলো তার রসুইঘরের যাত্রা। খুব অল্প দিনেই রসুইঘরের খাবার সবার মন জয় করল। সাথে শুরু করলেন BD Bazar অনলাইন শপ। বুটিক হাউজের নাম পরিবর্তন করে দিলেন Woman's Heaven.

২০২০ সালে এসে শুরু করলেন T20 Food নামে আরেকটি খাবারের বিজনেস। নাহিদ স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশে ৬৪টি জেলায় তার T20 Food এর কম হলেও একটা করে আউটলেট থাকবে।

আর যারা সমালোচনা করেছেন তারাই এখন নাহিদকে নিয়ে গর্ব করেন। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় নাহিদকে নিয়ে লেখার পেপার কাটিং সংগ্রহ করেন তারা শখের বসে, টিভিতে নাহিদের প্রোগ্রাম দেখে তাকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। ২০২০ এর ২৩ শে সেপ্টেম্বর শুরু করলেন ভোলা ট্যুরিস্ট ক্লাব। এই বার তিনি চান নিজের জেলাকে ব্যান্ডিং করতে। ভোলার সব দর্শনীয় স্থান গুলোর পরিচয় করিয়ে দিতে চান বাংলাদেশের মানুষের সাথে। তিনি ট্যুরিস্ট ক্লাব নিয়ে এত দূর যেতে চান যত দূর গেলে মানুষ ছুটি পেলে ভোলার সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসবে। ভোলা ট্যুরিস্ট ক্লাবের লক্ষ্য একটাই, দ্বীপের রাণী ভোলা হোক পর্যটন কেন্দ্র।

এভাবেই এগিয়ে চলছে এক হার না মানা নারী। আর তার লক্ষ্য একটাই, সে ভবিষ্যতে অসহায় মেয়েদের জন্য কাজ করবে এবং তাদের পাশে থাকবে।

সান নিউজ/আইআর/এনকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সংহতি জানালো মুক্তিজোট

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জ...

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে লক্ষ্মীপুরে হরতাল অবরোধ

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান ধ্বংসযজ্ঞ...

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলনে কৃষকরা খুশি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব মিষ্টি কুমড়া যাচ্ছে দেশে...

টিভিতে আজকের খেলা

প্রতিদিনের মতো আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) বেশ কিছু খেলা প্রচারিত হবে টেলিভিশনের পর্...

ইসরায়েল নিশ্চিহ্নে হামাস ইরানের কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার চেয়েছিল!

ইরান ও হামাস নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ইসরায়েলে...

নীলফামারীতে বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস অনুষ্ঠিত

‘সাহসী ও দায়িত্বশীল আগামীর প্রজন্ম’ প্...

বগুড়ায় খুন করে হাসপাতালে রেখে গেল লাশ

বগুড়ার শেরপুরে পরকীয়ার জেরে কাবিল হোসেন (৪০) নামের...

ভালুকায় মুখোশধারী নারী নেতৃত্বে সশস্ত্র ডাকাতি

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাচিনা গ্রামে এক ভয়াবহ ড...

দেশে বিনিয়োগ সহজ করার লক্ষ্যে কাজ করেছি: প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এত অনুকূল পরিবেশ এর আগে কখনো ছিল না বলে মন্তব্য করেছ...

'বিমসটেককে গতিশীল করতে চান প্রধান উপদেষ্টা'

আগামী দুই বছরে চেয়ারম্যান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিমসটেককে একটি গতিশীল প্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা