নিজস্ব প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সঠিক সময়ে তালিকা না দেওয়ায় মাত্র কয়েকদিন কাজ করার পরই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৪০ দিনের কর্মসূচির প্রায় আড়াই কোটি টাকা ফেরত যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে।
শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে শাহাবাজপুর ও বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্মসূচির প্রকল্প তালিকায় দরিদ্র ব্যক্তিদের নামের তালিকা সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রেরণ করেননি। এছাড়া বাকি ১৩টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ অনেক দেরিতে তালিকা দেওয়ায় কর্মসূচির কাজ অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে। ফলে কোন ইউনিয়নে তিন দিন, কোন ইউনিয়নে চার দিন, কোন ইউনিয়ন ১২ দিন, আবার কোন ইউনিয়নে সর্বোচ্চ ১৪ দিন কাজ করতে পেরেছে।
অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩১ জানুয়ারি। শ্রমিকের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ হাজার ৭শ জন। সুনির্দিষ্ট সময়ে ইউপি চেয়ারম্যানরা তালিকা না পাঠানোর কারণে কর্মসূচির বরাদ্দের ৩ কোটি ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকার মধ্যে আড়াই কোটি টাকা অর্থাৎ মোট টাকার ৮০ ভাগ টাকা ফেরত চলে যাচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে। এতে কর্মহীন শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। মৌসুমে দুস্থ পরিবারের স্বল্প মেয়াদি কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজ থেকে বঞ্চিত হয়েছে প্রায় ৩ হাজর ৭শ শ্রমিক। কর্মসূচির কাজ বাস্তবায়ন হলে প্রত্যেক শ্রমিক পেতেন ৮ হাজার টাকা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, এর আগে কর্মসূচির তালিকায় শ্রমিকদের নাম থাকলেও বাস্তবে কাজ করানো হয়েছে বাইরের শ্রমিক দিয়ে। ৪০ দিনের কর্মসূচিতে প্রকল্প তালিকার শ্রমিক দ্বারা কাজ না করিয়ে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়েছেন চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ। যা প্রকল্পের নিয়ম বহির্ভূত কাজ। তাই প্রকল্পের চলমান কাজে হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন শ্রমিকেরা।
এদিকে, গেল অর্থবছরের পাঁকা ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজ বাস্তবায়ন হলেও এখনো টাকা পাননি ১৩০ জন শ্রমিক। অথচ ওই টাকা সংশ্লিষ্ট বিভাগে ফেরত যায়নি।
একাধিক চেয়ারম্যান জানান, অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচিতে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে এবার জটিলতার কারণে শ্রমিকদের তালিকা দিতে বিলম্ব হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, একটি ঘটনার তদন্তের জন্য টাকা আটকা পড়ে আছে। তবে এ টাকা শ্রমিকরা পাবেন। কর্মসূচির ৮০ ভাগ টাকা ফেরত যাবার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি আরও বলেন, জানান উপজেলার শাহাবাজপুর ও বিনোদপুর ইউনিয়ন থেকে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্পে শ্রমিকদের নামের তালিকা না দেওয়া এমন ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বী জানান, টাকা ফেরত যাবার মূল কারণ হলো দুটি। একটি হলো যেখানে কাজ করার কথা সেখানে করে শ্রমিক পাওয়া যায়নি। যাদের পাওয়া যায়নি তাদের নাম তালিকা থেকে কেটে দেয়া হয়েছে। অন্যটি হলো সঠিক সময়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকা না দেওয়ায় সঠিক সময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তাই মেয়াদ পর্যন্ত যে কয়দিন কাজ করা সম্ভব হয়েছে সে দিনের পারিশ্রমিক পাবেন। বাকি টাকা সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে ফেরত যাবে।
সান নিউজ/জে/কেটি