নিজস্ব প্রতিনিধি, যশোর : আজ যশোর উদীচী হত্যাকাণ্ডের ২২ বছর। নৃশংস এ হত্যাযজ্ঞের ২২ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁধে। আজও মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি ঘাতকদের। এমনকি এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের হোতাদের মুখোশ উম্মোচনও করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
হত্যার বিচারের অপেক্ষা করতে করতে হতাশ হয়ে পড়েছেন নিহতের স্বজন, আহত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। তবে সরকারি কৌঁসুলির প্রত্যাশা, শিগগিরই উচ্চ আদালতে মামলাটির কার্যক্রম শুরু হবে।
শনিবার (৬ মার্চ ) ১৯৯৯ সালে গভীর রাতে যশোর টাউন হল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পর পর দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ১০ জন। আহত হন আড়াই শতাধিক নিরীহ মানুষ। প্রতি বছর এই দিনে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা, শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে মোমবাতি প্রজ্বালন আর বিচারের একই দাবি করে আসছেন স্বজন, বন্ধু ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহত নূর ইসলাম, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রানী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় এবং রামকৃষ্ণের পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে। এত বড় একটি বর্বর ঘটনার বিচার এবং ঘাতকদের শাস্তি না হওয়ায় এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বোমা হামলায় আহতরা।
উদীচী ও আদালত সূত্র জানায়, সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যান এ মামলার সব আসামি। পরে সরকার রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়।
কিন্তু এরপর মামলাটির আপিল শুনানি আর হয়নি। আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এ দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত এ মামলার কার্যক্রম চালু করার দাবি জানান। উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহত তপনের বোন নাজমুস সুলতানা বিউটি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে অনেক বিচার হচ্ছে।
কিন্তু দীর্ঘদিনেও উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হচ্ছে না। আমার মা বার্ধক্যে পড়েছেন। মৃত্যুর আগে সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে চান। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি, দ্রুত উদীচী হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক।
উদীচী ট্র্যাজেডিতে দুই পা হারানো নাহিদ বলেন, দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন হামলাকারীদের বিচার দেখতে চাই। বোমা হামলায় এক পা হারানো সুকান্ত দাস বলেন, একের পর এক বছর চলে যাচ্ছে। কিন্তু উদীচী হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি। প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি চাই।
সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকারের আন্তরিকতা প্রয়োজন। ১৯৯৯ সালে উদীচী ট্র্যাজেডির সময় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। বতর্মানেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। এ সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। তাহলে উদীচী ট্র্যাডেজির বিচার কেন বিলম্বিত হচ্ছে। অবিলম্বে উদীচী হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যশোরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুবুর রহমান মজনু বলেন, দেশে বোমা হামলার কালো অধ্যায় শুরু হয় যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে। নৃশংস এ হামলার খলনায়কদের ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। এদের নিশ্চিহ্ন ও বিচারের মুখোমুখি করা না গেলে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর এ ষড়যন্ত্র থামানো কঠিন।
যশোর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ইদ্রিশ আলী বলেন, বর্তমানে মামলাটি উচ্চ আদালতে আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ মামলার ২৩ আসামির মধ্যে দুজন নিহত এবং একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। বাকিরা জামিনে রয়েছেন। তিনি এ মামলা নিয়ে এ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি আশাবাদী, শিগগির উচ্চ আদালতে মামলাটির কার্যক্রম শুরু হবে।
সান নিউজ/এসএ