জাহিদ হাসান মাহমুদ মিম্পা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কে দুর্ঘটনা ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এ সড়কে প্রায়ই ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানী ঘটলেও রোধে তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন এসব সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অধিক গতি, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব দায়ী। সড়ক নিরাপত্তার জন্য একাধিক সরকারি নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত রয়েছে। কিন্তু এগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়ায় সড়কে বিশৃঙ্খলা চলছেই। এ কারণে প্রতিদিনই প্রাণ ঝরছে এ মহাসড়কে।
বুধবার (৩ মার্চ) বিকেলে বারোঘরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত ১৫ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৬ জন। এদের মধ্যে ৪ জনই কলেজছাত্র। আহত হয়েছেন এমন সংখ্যাও কম নয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মহাসড়কে ভটভটি, নসিমন ও অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ হলেও তা নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগই নেই। দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা। বারবার দুর্ঘটনার কারণে এখন আতঙ্কিত এই সড়কে চলাচল করা সাধারণ যাত্রীরা।
মঙ্গলবার (২ মার্চ) দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় গতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ১০ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে অনলাইনভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বেটার চাঁপাইনাবগঞ্জ’। মহাসড়কের ধারে কয়েকটি এলাকায় শুধু ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা, আস্তে গাড়ি চালান’ এমন ধরনের কয়েকটি সাইনবোর্ড টাঙিয়েই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এই সড়কে দিন-রাত সব সময়ই বেপরোয়া যান চলাচল করলেও তা নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের একমাত্র সড়ক এটি। ব্যস্ততম এ মহাসড় এখন নিরাপদ নয়, প্রতিদিন সড়কটিতে ঘটছে জীবননাশের মতো ঘটনা। ঝরে যাচ্ছে অকালে অনেক প্রাণ।
অদক্ষ গাড়ি চালক, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, সড়কে রোড ডিভাইডার ও বিভিন্ন স্থানে স্পিড ব্রেকার না থাকা এবং চালকদের গাড়ি চালানোর গতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। মৃত্যুর মুখে পড়ছে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি অবৈধ যানবাহন এই মহাসড়কে চলাচলের কারণেও এমন দুর্ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয়দের দাবি। বিশেষ করে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর সেতুর টোলঘর এলাকা থেকে কানসাট পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে কয়েকগুণ।
মশিউর রহমান জিহাদ নামে এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কে এতো দুর্ঘটনা হচ্ছে, তারপরও কোন পরিবর্তন নেই। কে কার আগে যাবে প্রতিযোগিতা করতে থাকেন চালকরা। প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে করতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। আবার পথচারীরাও ইচ্ছামতো রাস্তা পার হয়ে যাচ্ছেন। এ দুটিই বন্ধ হওয়া উচিত। চালক ও পথচারী সাবধান হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন সড়ক আইন প্রয়োগে তৎপর থাকে সে ব্যাপারে নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন জাসদ ছাত্রলীগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার সভাপতি আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সড়কে চলাচল করা মোটরসাইকেল চালকদের ব্যাপারে পুলিশ তৎপর। তবে ট্রাক-বাস বা অন্যসব অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তেমন তৎপরতা দেখা যায় না। গণপরিহন, পণ্যবাহী যান ও অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। আইন প্রয়োগে পুলিশ কঠোর হলে সড়কে শৃঙ্খলা আপনা আপনি আসবে। কমবে সড়ক দুর্ঘটনা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ আদালতের আইনজীবী এ্যাডভোকেট ড. তসিকুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রপ্তিক সময়ে এ সড়কের বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ওভারলোডিং ও ওভারটেকিং নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সেই সাথে থ্রি হুইলার অপসারণেও প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। উন্নত দেশের মতো সড়কে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় কি-না সেটিও ভেবে দেখার সময় এসেছে।
সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মামলা দায়ের থেকে শুরু করে নিস্পত্তি পর্যন্ত দীর্ঘসূত্রিতা এবং সাক্ষ্য গ্রহণে জটিলতা মীমাংসা করা না গেলে আইনের সুফল থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হবে। একটা মামলায় জাজমেন্ট হয়, আপিল হয়, রিভিউ হয়। সব মিলিয়ে অনেক সময় লেগে যায়। এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনায় সাক্ষ্য গ্রহণ নিশ্চিত করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
সান নিউজ/কেটি