নিজস্ব প্রতিনি|ধি, গাজীপুর : গাজীপুরে ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে আলো ছড়াচ্ছে সরকারের সৌরশক্তি। এ প্রকল্পের আওতাধীন জেলার ৩টি উপজেলার ৭টি গ্রামের কয়েকশ কৃষক কোন প্রকার টাকা ছাড়াই পাচ্ছেন সেচ সুবিধা। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে এ সেচ কর্মসূচি একদিকে কৃষি উৎপাদন ব্যয় কমাচ্ছে, অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় রোধ করছে।
গাজীপুর কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) (সেচ অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশের বেশীরভাগ কৃষক ডিজেল চালিত সেচ মেশিন ও বিদ্যুৎচালিত মোটরের সাহায্য বোরো মৌসুমে সেচ কাজ করে থাকেন। এ পদ্ধতিতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার কারণে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয় কৃষকদের।
ভূগর্ভস্থ পানিরও অপচয় হয়। সরকার কৃষির উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির ব্যবহার বাড়াতে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প চালু করে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রীপুর উপজেলার নান্দিয়াসাঙ্গুন গ্রামে দুটি, ধামলই গ্রামে দুটি, কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামে একটি ও গাজীপুর সদরের পিরুজালী গ্রামে দুটি সোলার পাম্প স্থাপন করা হয়।
প্রতিটি সোলার পাম্প স্থাপনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৩ লাখ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারযোগ্য এ সেচ ব্যবস্থায় আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। নান্দিয়াসাঙ্গুন গ্রামের কৃষক আবু নাছের বলেন, ডিজেল চালিত মেশিন দিয়ে ৩৩ শতকের ১ বিঘা জমিতে সেচ দিতে ১ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হতো। সোলার পাম্প স্থাপন করায় সে খরচ বেঁচে গেছে। এতে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ কমেছে।
তিনি আরও বলেন, কৃষকদের সমন্বয়ে সমিতি গঠন করে এ সোলার পাম্পের স্কিম পরিচালিত হচ্ছে। ইরি ও বোরো মৌসুম ছাড়াও বছরজুড়ে নানা ধরনের মৌসুমি সবজির চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ সেচ পাম্প।
কৃষক বাদল মিয়ার দাবি, এসব সোলার পাম্পে উৎপাদিত শক্তি সংরক্ষণের জন্য ব্যাটারির ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে শুধু দিনের বেলায় সেচ দেয়া যায়। এছাড়া শীতকাল ও আবহাওয়া খারাপ থাকলে সেচ দেয়া যায় না। ব্যাটারির ব্যবস্থা থাকলে রাতের বেলায়ও সেচ দেয়া যেত। এতে এ সেচ সুবিধার আওতায় আসত আরও বেশি সংখ্যক কৃষক।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ক্ষুদ্র সেচ বিভাগের গাজীপুর ও মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ফারুক হোসেন বলেন, পরিবেশ বান্ধব সেচ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে গুরুত্ব দিয়ে সৌরশক্তির এ সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এ সেচ পাম্প চালাতে কোনও খরচ না হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা সৌর বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্পের দিকে ঝুঁকছেন।
সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সারোয়ার হোসেন বলেন, কৃষিবান্ধব সরকার কৃষির উন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পানি সংরক্ষণ, সেচের অপচয় রোধ, ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ তেমনি একটি উদ্যোগ। কৃষকদের মাঝে সৌরশক্তি ব্যবহারে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। এতে কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক কমবে।
সান নিউজ/এসএ