নিজস্ব প্রতিনিধি, নরসিংদী : রিকশাচালককে ট্রাফিক পুলিশের ‘স্যালুট’ জানানো ও মানিব্যাগ থেকে টাকা দেয়ার দৃশ্যের ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। নরসিংদী শহরের মোসলেহ উদ্দীন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামের সামনের এই ঘটনাটি অনেকের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে।
জানা যায়, শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন নরসিংদী পুলিশ লাইনের কনস্টেবল সোহাগ হোসেন। ২৮ বছর বয়সী এই পুলিশকে পেছন থেকে ডাক দেন ষাটোর্ধ এক রিকশাচালক। যাত্রী ভাড়া না দিয়ে চলে যাওয়ায় এক ঘণ্টা ধরে ওই স্টেডিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
একপর্যায় ওই রিকশাচালক সোহাগের কাছে ২০ টাকা চান। এসময় কিছু কথা বলে তিনি প্যান্ট থেকে মানিব্যাগ বের করে টাকা দেন। তারপর খাবারের একটি দোকানও দেখিয়ে দেন তিনি। এই মহতী কাজের ভিডিও রেকর্ড ধরা পড়ে পাশের দোকানের সিসিটিভি'তে। সেখান থেকে ভিডিও সংগ্রহ করেন স্বপন শেখ নামে এক কারিগরি কলেজের শিক্ষার্থী। পরে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে ভাইরাল হয়ে যায়।
এবিষয়ে স্বপন শেখ বলেন, ‘আমি এই ঘটনা সরাসরি দেখেছি। ওইদিন বিকেলে আসরের নামাজে যাওয়ার সময় এক রিকশাচালককে ওই পুলিশ সদস্যের টাকা দিতে দেখি। বিষয়টিতে অবাক হয়েছি। নামাজ শেষে পুরো ঘটনা জানার পর ভিডিওটা সংগ্রহ করি। পরে ফেসবুকে পোস্ট করি। পুলিশের এই ভালো কাজ সকলের কাছে ছড়িয়ে দিতেই আমি মূলত এটি পোস্ট করেছিলাম’।
পুলিশ সদস্য সোহাগ হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় জন্ম নেয়া এই ব্যক্তি বাহিনীতে যোগ দেন ২০১১ সালের আগস্ট মাসে। তিনি এক বছর ধরে নরসিংদীতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কোনো সময় ট্রাফিকের সংকট হলে অতিরিক্ত হিসেবে সোহাগ দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বলেন, আমার কাছে নাশতা খাওয়ার টাকা চায় রিকশাচালক চাচা। লোকটাকে দেখে আমার মায়া লেগে যায়। তারপর কথা বলার সুযোগ দেই। এরপর আমি তাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করি। তার আগে আমি উনাকে হাত উঠিয়ে সালাম দেই। এই বয়সেও তিনি নিজের কাজ নিজে করছেন দেখে নিজ থেকে সম্মান দিতে ইচ্ছে হলো।
নিজেকে সেবক হিসেবে দাবি করে সোহাগ বলেন, সেবা করতে চাই, আমাদের প্রতি মানুষের ভুল ধারণাগুলো দূর করতে চাই। পুলিশ শুধু আসামির পেছনে দৌড়ায় না, মানবিক কাজও করে’।
সোহাগের এই কাজকে সাধুবাদ জানিয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘পুলিশ জনগণের সেবক। আমরা জনগণের জন্যই কাজ করি। আমাদের প্রতি অনেকের ভুল ধারণা- যা পীড়াদায়ক। বিশেষ করে ট্রাফিক বিভাগে যারা কাজ করে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে থাকেন। সোহাগের মতো এরকম মানবিক সদস্য আমাদের পুলিশের গর্ব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল একদল মানবিক পুলিশ সদস্য গঠন করা। আমরা উদ্ধার অভিযানসহ বিভিন্ন মানবিক কাজে জনগণের পাশে রয়েছি এবং ভবিষ্যতে থাকবো’।
সান নিউজ/এসআইআর/এসএস