চট্টগ্রাম ব্যূরো : বৈদ্যুতিক শক ও বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে রূপম কান্তি নাথ নামে এক হাজতিকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার শফিকুল ইসলামসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) হাজতির স্ত্রী ঝর্ণা রানী দেবনাথের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত এ মামলা গ্রহণ করেন। সেই সাথে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বাদির পক্ষে মামলাটি দায়ের করেন আইনজীবী ভুলন লাল ভৌমিক। তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দেয়া নির্দেশনা মেনেই মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার আবেদন করেছি। আদালত শুনাশি শেষে পিবিআইকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া বন্দি ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে নতুনভাবে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ১১ ধারায় আরও একটি পিটিশন দেয়া হয়েছে।
এর আগে সোমবার (১ মার্চ) রূপম কান্তি নাথ নামে ওই হাজতিকে বৈদ্যুতিক শক ও বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসাইন মোহাম্মদ রেজার আদালতে অভিযোগ দেন। এতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার শফিকুল ইসলাম, জেলার, জেলখানার কর্তব্যরত চিকিৎসক ও সাতকানিয়া উপজেলা কালিয়াইশ ইউনিয়নের মৃত বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্যের ছেলে রতন ভট্টাচার্যকে বিবাদী করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হেফাজত মৃত্যু নিবারণ আইন ২০১৩ এর (১ ও ২) এবং ক, খ, গ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। আদালত অভিযোগটি আমলে নিলেও ওইদিন কোন আদেশ দেননি। পরদিন আদালত অভিযোগটি উপযুক্ত আদালতে পুনরায় তোলার আদেশ দেন।
ঝর্ণা রানী দেবনাথ আদালতে দাখিল করা অভিযোগে দাবি করেন, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর তার স্বামী রূপম কান্তি নাথ জিআর ৩৩২/১৮ নম্বর মামলায় সুস্থ অবস্থায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি হন। ভিকটিম থেকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে সম্মতি আদায়ের জন্য বিবাদীরা পর¯পর যোগসাজশে চট্টগ্রামের কারাগারের সাঙ্গু ১ নম্বর ভবনে গত ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারির যেকোন সময় বৈদ্যুতিক শক ও বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে রূপম কান্তি নাথকে হত্যা চেষ্টা করা হয়।
সংবাদ পেয়ে স্ত্রীর পক্ষে রূপমের আইনজীবী তার সঙ্গে দেখা করেন। পরে হাজতি রূপমকে উন্নত চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে মহানগর জজ আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী। আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের এমএক্স ১২ নম্বর বেডে ভর্তি করানো হয়। এ ঘটনার পর বাদি ঝর্ণা হাসপাতাল পরিচালকের কাছে আলামত সংগ্রহ করে রাখতে আবেদনও করেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, কারা কর্তৃপক্ষের তত্ববধানে চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের এমএক্স ১২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ভিকটিম রূপম কান্তিনাথের মুখ, হাতসহ সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার অন্ডকোষে আগুনের ছ্যাঁকা দেয়ার মতো চিহ্ন পাওয়া গেছে। পুরো অন্ডকোষ, পুরুষাঙ্গসহ বিভিন্ন স্থান আগুনে ঝলসে গিয়ে মাংসপিন্ড খসে পড়ার মতো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া রোগীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
সান নিউজ/আইকে/কেআর