সারাদেশ

লালদিয়া চর দখলে চট্টগ্রাম বন্দর, গৃহহারা ২৩০০ পরিবার

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কর্ণফুলী দখল উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে পতেঙ্গার ১৩ নম্বর খালের উত্তর ও ১৪ নম্বর খালের দক্ষিণ পাশে লালদিয়া চরের ৫২ একর জায়গা দখলে নিলো চট্টগ্রাম বন্দর। দিলো কাঁটাতারের বেড়া। এতে গৃহহারা হয়েছেন চরের ২ হাজার ৩০০ পরিবার।

তবে তাদের কাউকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করতে হয়নি। আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে চরের বাসিন্দা নিজেরাই ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে ও কেটে সরিয়ে নিয়েছেন বলে সোমবার (১ মার্চ) বিকেলে মত প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান।

তিনি বলেন, সোমবার সকাল থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর। কিন্তু লালদিয়া চরবাসীর শান্তিপূর্ণ প্রস্থান করেছে। আমরা তাদের আগেই বলেছি, বুলডোজার বা স্ক্যাভেটর দিয়ে ভাঙার অভিপ্রায় নেই। প্রয়োজনে লেবার ও ইক্যুইপমেন্ট সহায়তা দেব। তারা গরিব হলেও আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা ঢিল পর্যন্ত ছুঁড়েনি। আমাদের কয়েকশ কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। তারা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে লালদিয়া চর এলাকা ঘেরা দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় বন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটসহ বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা লালদিয়ার চর এলাকা সোমবার সকাল থেকে পরিদর্শন করেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্য।

বাসিন্দাদের মতে, কর্ণফুলী নদী রক্ষায় হাইকোর্টের নির্দেশে লালদিয়া চরের ৫২ একর জায়গা দখলমুক্ত করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। উচ্ছেদ করা হচ্ছে স্থানীয় ও ছিন্নমূলসহ ২ হাজার ৩০০ পরিবারের ১৪ হাজার মানুষকে। এতে ভেঙ্গেছে তাদের স্বপ্ন। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ভবিষ্যৎ।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর এলাকাটি উচ্ছেদ করার ঘোষণা দেয়ার পরপরই লালদিয়া চর এলাকার বাসিন্দারা প্রথমে উচ্ছেদ না করার অনুরোধ জানায়। পরবর্তীতে উচ্ছেদ নিশ্চিত জেনে তারা পুনর্বাসনের দাবি করে।

কিন্তু উচ্ছেদের আগে থেকে লালদিয়াবাসী তাদের বাড়ি-ভিটা ছাড়তে শুরু করেন। অনেকে ভাঙাবাড়ি, আসবাব বিক্রি করে দেন নামমাত্র মূল্যে। কেউ কেউ এখনো বাসস্থান নিশ্চিত করতে না পেরে ভ্যানে ও নৌকায় মালামাল তুলে রাখছেন। বসতবাড়ি উচ্ছেদ হলেও লালদিয়ায় থাকছে একটি মসজিদ, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা, যা ১৯৭২ সালে তৎকালীন সরকার নির্মাণ করে।

মানুষ না থাকলে মসজিদে কে আসবেন উল্লেখ করে লালদিয়াচর মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল কাদের বলেন, আমাদের এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। যারা কিছুটা সলভেন্ট (সচ্ছল) তারা বিভিন্ন জায়গায় বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এখনো গৃহহীন। কেউ কেউ আত্নীয়-স্বজনের ঘরে উঠছে। আত্নীয়-স্বজন মেহমানদের কতদিন রাখবে!

লালদিয়া চর পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হাসান বলেন, ২ হাজার ৩০০ পরিবারের ১৪ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ১৯৭২ সালে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি জহুরুল হক তৈরির সময় সরকার আমাদের নিষ্কণ্টক জমি নিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু সরকার আমাদের ১৯৭২ সালে এ জায়গা দিয়েছে।

ডিসি অফিসে আমরা ২ বছর খাজনা দিয়েছি। কিন্তু আমাদের দুঃখ হলো-আমাদের এখন উচ্ছেদ করার পাশাপাশি দখলদার বলা হচ্ছে। অথচ ২০০৫ সালে ইনকনট্রেড ডিপো তৈরির জন্য আমি পরিবারসহ উচ্ছেদ হয়েছি। আমাদের পারিবারিক কবর এখন ইনকনট্রেড ডিপোর টয়লেট। এরপরেও যে মন্ত্রীর বাড়ি দিনাজপুর, উনি আমাদের দখলদার বলছেন।

ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে বসবাস করে স্বপ্নের বীজ বুনা সেই জায়গার মায়ার বাঁধন ছিন্ন করতে হচ্ছে। এ কষ্ট যেন মেনে নেয়ার মতো নয়। সরকারের সাথে তো যুদ্ধ করে পারব না। তাই স্বদ্যোগেই কাঁচা, পাকা, সেমিপাকা ঘর ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। এ সময় বৃদ্ধ, নারী, শিশুসহ অসহায় মানুষগুলোর কান্না আর আহজারীতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

বাসিন্দদাদের আকুতি, মানবতার মা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন তাদের দিকে ফিরে চায়; পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়। রোহিঙ্গারা দেশের ভূমিতে উন্নত আবাসন সুবিধা পেলে স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে নিজেরা কেন গৃহহীন থাকবে। এমনটাই প্রশ্ন সবার।

সান নিউজ/ আইকে/

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সবজির বাজারে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কমেছে পেঁয়াজ, সবজি...

বৈষম‌বিরোধী আন্দোলনে বেঁচে ফেরার আশা করেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন আন্দোল&zwnj...

বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেন পূজা 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চিত্রনায়িকা ও মডেল পূজা চেরি ডজনখানেক ছব...

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা, নারী আটক

জেলা প্রতিনিধি : সাভারের আশুলিয়ায় জীবিত স্বামীকে বৈষম্যবিরোধ...

ঢাকায় বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি দল

নিজস্ব প্রতিবেদক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাই...

শেখ হাসিনাসহ ৬১ জনের নামে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জে আদালতের নির্দেশে সাবেক প্রধা...

গুমের সঙ্গে জড়িতরা পার পাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বের কোথাও গুমের সঙ্গ জড়িতরা পার পায়নি...

বাংলাদেশিদের পাঁচ দেশ ভ্রমণে সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বের ৫ দেশে যেতে চাওয়া বাংলাদেশিদের জন...

টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক : দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে টস জিতে ও...

কলম্বিয়ায় গেরিলা হামলায় নিহত ৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কলম্বিয়ার আনোরিতে ন্যাশনাল লিবারেশন আর্ম...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা