নিজস্ব প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও : সুস্থ হয়ে উঠেছে জবাই থেকে রক্ষা পাওয়া বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইটি। ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিজিবির কান্তিভিটা সীমান্ত ক্যাম্পে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়।
এর আগে সোমবার (১ মার্চ) বিকেলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার শৌলা দোগাছি এলাকা থেকে আহত অবস্থায় নীলগাইটিকে উদ্ধার করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)র কান্তিভিটা বিওপির সদস্যরা। বর্তমানে চারদিকে বাঁশের বেড়া ঘেরা দিয়ে রাখা হয়েছে নীলগাইটিকে। সেখানে গমের শিষ, কচি কাঁঠালপাতা আবার কখনো বাঁধাকপি খাবার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে।
উদ্ধারের সময় নীলগাইটিকে ৪ পা বেঁধে রাখা হলেও সেটি এখন কখনো বসে, আবার কখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
বিজিবির কান্তিভিটার সীমান্ত ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আফলাতুন নিজামী বলেন, বিরল প্রজাতির প্রাণীটি গ্রামবাসীর নজরে এলে তারা সেটিকে ধরতে আক্রমণ চালান। গ্রামবাসীর হাত থেকে নিজেকে রক্ষায় ছোটাছুটি করতে গিয়ে নীলগাইটি। ধরা পড়ার পর গ্রামবাসী প্রাণীটিকে জবাই করার চেষ্টা করে। সে সময় তাদের কাছ থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রাণীটিকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রাণীটির চার পা গাছের সঙ্গে শিকল ও রশি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়। এরপরও প্রাণীটি শিকল ছিঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে।
পরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন আহত প্রাণীটির চিকিৎসা দেন। সে সময় তারা নীলগাইটির শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে গলার কাটা অংশে ১৭টি সেলাই করে ক্ষতস্থানগুলোতে ওষুধ লাগিয়ে দেন।
বিজিবি কর্মকর্তা আফলাতুন নিজামী আরও বলেন, উদ্ধারের পর নীলগাইটি যেমন অসুস্থ ছিল, এখন তেমন নেই। গত বৃহস্পতিবার চারদিকে বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি ঘেরায় (এনক্লোজার) নীলগাইটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে প্রাণীটি সেখানে কখনো বসে, কখনো দাঁড়িয়ে খাবার খাচ্ছে। পশু চিকিৎসকের পরামর্শে প্রাণীটিকে খাবার দেওয়া হচ্ছে, যত্নও নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, নীলগাইটির শারীরিক অবস্থা যাচাইয়ের জন্য চার সদস্যের চিকিৎসক দল গঠন করা হয়েছে। সেই দলে ছিলেন রংপুর চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা এসএম শাহাদাৎ হোসেন, বিজিবির লে. কর্নেল মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাসিরুল ইসলাম, উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. নিয়ামুল শাহাদাৎ।
এ বিষয়ে নাসিরুল ইসলাম বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা নীলগাইটি কয়েক দিনের চিকিৎসায় এখন অনেকটাই সুস্থ। গলা ও দেহের কাটা জায়গাগুলো দ্রুত সেরে উঠছে। নীলগাইটি বিজিবি ক্যাম্পের এনক্লোজারে ১৫ দিন রেখে চিকিৎসা দেয়া হবে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে সেটাকে অবমুক্ত করা হবে।
নীলগাইটিকে আপাতত গমের শিষ, কচি কাঁঠালপাতা, বাঁধাকপিজাতীয় সবজি খাওয়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে নীলগাইটি যেহেতু বনে ঘুরে ফিরে খাবার খেত, সে কারণে এখন সেটাকে দানাদার খাবার না দেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহানশাহ আকন্দ বলেন, উদ্ধার করা নীলগাইটি বন বিভাগের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরে তা বিজিবি কর্তৃপক্ষ নিজেদের হেফাজতে রেখে নীলগাইটিকে সুস্থ করতে সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর বিজিবি সেটি বনবিভাগের কাছে হস্তান্তরে আপত্তি জানায়। পরে জানতে পাই সুস্থ হলে নীলগাইটিকে বিজিবির হেডকোয়ার্টার পিলখানায় রাখা হবে।
বিজিবি ঠাকুরগাঁও ৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শহীদুল ইসলাম বলেন, আগে নীলগাইটি সুস্থ হয়ে উঠুক। সেটা কোথায় হস্তান্তর করা হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সান নিউজ/বিআইবি/ এনকে