স্বপন দেব, মৌলভীবাজার : ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে প্রতিদিন গড়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার যাত্রী চলাচল করে থাকেন। অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হওয়ায় সিলেট অঞ্চলের যাত্রীরা রেলকে নিরাপদ মনে করে রেলপথে ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কিন্তু মাত্র ৬ মানে ১৪টি রেল দুর্ঘটনা যাত্রী মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষে সীমাহীন উদাসীনতা, বিমাতাসুলভ আচরণ আর প্রয়োজনী অর্থ বরাদ্দ সর্বোপরি দক্ষ লোকবলে অভাব এ লাইনে ঘনঘন রেল দুর্ঘটনার কারণ বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন।
এ পথে প্রতিনিয়ত চলাচলকারী প্রদীপ মল্লিক ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী গোলাম রহমান বলেন, সিলেট অঞ্চলে প্রতিদিন লক্ষাধিক যাত্রী আসা যাওয়া করেন। নব্বই এর দশক থেকে এই লাভজনক পরিবহন ব্যবসাকে প্রাইভেট বাস সার্ভিসের দিকে যাত্রীদেরকে ফিরিয়ে নিতে পরিকল্পিতভাবে রেল সেবাকে চরম অবহেলা করা হয়েছে।
জেলা উপজেলা শহরগুলোতে চালু হয়েছে বড় কোম্পানীর লাক্সারি বাস সার্ভিস আর যাত্রীদের পকেট কাটা হচ্ছে। দু’দশক আগেও এ অঞ্চলে জ্বালানী তেল ছাড়াও নিত্য প্রয়োজনী সামগ্রী, চা, মৌসুমী ফল, তেজপাতাসহ বিভিন্ন মসলা, কাঠ রেলপথে পরিবহন করা হতো। এতে পরিবহন খরচও কম হতো আর ছিল নিরাপদ। বর্তমানে যাত্রীবাহী ট্রেন ও
জ্বালানী ওয়াগন পরিবহন ছাড়া বাকি সব কিছুই রেলে পরিবহন বন্ধ রয়েছে। ফলে পরিবহন ব্যবসা এখন চলে গেছে প্রাইভেট সেক্টরে। এতে রেল সেক্টর মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া-সিলেট অংশে ৬ মাসে ১৪ বার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ৪টি এবং ৫ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি জ্বালানী তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় ৯১ ঘণ্টা বন্ধ ছিল সিলেটের সাথে সারা দেশের রেল যোগাযোগ।
কুলাউড়া জংশন রেলস্টেশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকা ও সিলেটের পথে অন্তত পাঁচ কি.মি. এলাকায় ঘনঘন ঘটছে লাইনচ্যুতির ঘটনা। হবিগঞ্জের মাধবপুর, শাহজীবাজার ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া ও ফেঞ্চুগঞ্জে ঘটছে ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা।
রেল কর্তৃপক্ষের মতে নাজুক রেলপথ ও মেয়াদ উর্ত্তীণ সেতুকে ট্রেন লাইনচ্যুতির জন্য দায়ী। এ রেল লাইনের ৯০ ভাগ কাঠের স্লিপার অত্যন্ত পুরোনো ও ব্যবহার অনুপোযোগী। তাই শায়েস্তাগঞ্জের পর থেকেই সব আন্তঃনগর ট্রেন ও মালবাহী ট্রেন গতি কমিয়ে চলাচল করতে হয়। ফলে সময়মতো এ লাইনে রেল চলাচল করতে পারছে না।
রেলের সিলেট বিভাগীয় আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক সাদিকুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেই আলোকে পরবর্তীতে সংস্কার পরিকল্পনা নেয়া হবে।
সিলেট বিভাগের যাত্রীদের দাবি দ্রুত এ রেলপথের সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে যাত্রীরা রেল বিমুখ হয়ে পরবে, যা হবে রেলের জন্য আত্মঘাতি।
সান নিউজ/কেটি